December 18, 2024
বাংলাদেশ সহ সারা দুনিয়ায় চাপে ভারতের আদানি গ্রুপ

বাংলাদেশ সহ সারা দুনিয়ায় চাপে ভারতের আদানি গ্রুপ

বাংলাদেশ সহ সারা দুনিয়ায় চাপে ভারতের আদানি গ্রুপ

বাংলাদেশ সহ সারা দুনিয়ায় চাপে ভারতের আদানি গ্রুপ

গৌতম আদানি, আদানি গ্রুপের ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক। নব্বইয়ের দশকে তিনি কয়লা ব্যবসায় নিজের ভাগ্য গড়েন। পরে, আদানি গ্রুপ বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে জড়িত ছিল, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে রাস্তা নির্মাণ এমনকি ভোজ্য তেল বিক্রি করা পর্যন্ত। আজ, তাদের ব্যবসা বন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু এখন,

আদানি এখন সারা বিশ্বে খবরের পাতায় । প্রতিটি দেশেই তিনি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছেন। কেনিয়া ইতিমধ্যেই আদানি গ্রুপের সঙ্গে দুটি চুক্তি বাতিল করেছে। ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে ঘুষ নেওয়ার মামলায় ধরা পড়েছেন। নিউইয়র্কের একটি গ্র্যান্ড জুরি তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় আদানির কয়লা খনিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে আদানির চুক্তির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

আর বাংলাদেশের সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে আদানি গ্রুপ এখন কাঠগড়ায়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কী করবে? ইতোমধ্যে এই চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। রুলসহ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রুলে চুক্তিটি অসম, অন্যায্য ও দেশের স্বার্থবিরোধী দাবি করে কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। শুধু তাই নয়, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা আদানিকে নিয়ে অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে যে কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এএপি-র শীর্ষ নেতারা ঘুষের মামলায় নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে শিল্পপতি গৌতম আদানিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও আদানিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আদানিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত।

ভারতীয় ধনকুবের আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে নিউইয়র্কের একটি আদালত। ঘুষের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এই পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর আফ্রিকার দেশ কেনিয়া ভারতীয় আদানি গ্রুপের সঙ্গে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের দুটি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো সম্প্রতি  পার্লামেন্টে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন। বহির্বিশ্বের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশেও আদানি গ্রুপের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা হাইকোর্ট আদানি গ্রুপের সঙ্গে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এর একদিন পর আদানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানি ও শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে জ্বালানি চুক্তি শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। কারণ হাসিনার আমলে অন্যান্য জ্বালানি চুক্তির মতো টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে চুক্তিটি করা হয়নি। তা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মার্কিন অভিযোগের পর সংলাপের সেই জায়গা সংকুচিত হতে পারে। কেননা গ্রুপটি মূল্য নির্ধারণে আপস করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৃহত্তর চাপের সম্মুখীন হতে পারে।

বাংলাদেশে আদানি পাওয়ার নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে ভারত G2G চুক্তির অধীনে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে এবং প্রয়োজন না হলে একটি প্রাইভেট কোম্পানির সাথে চুক্তিতে হস্তক্ষেপ করবে না।

আদানি পাওয়ার ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। প্ল্যান্টটি একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে তৈরি করা হয়েছিল।

আদানি একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল যা প্রথমে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছিল। কারণ এটি বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বড় কয়লার চালান পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ছিল। তাই আদানির প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য ছিল। তবে সমালোচকরা বলতে শুরু করেছেন যে, আদানি ভারত সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পেয়েছে। সেই সুবিধা বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি হয়নি।

এদিকে, কেনিয়ার চুক্তি বাতিল করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদানিকেও মানসিক চাপে ফেলবে। কেনিয়ার বাতিল হওয়া দুটি চুক্তির মধ্যে একটির মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ দিয়ে কেনিয়ার জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে তৈরি করার কথা ছিল আদানির। এ ছাড়া, ৩০ বছরের লিজের অধীনে বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনালের উন্নতি করার কথা ছিল।

এছাড়াও, কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি রুটো আদানির সাথে ৭৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৩০ বছরের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি বলেছেন যে, তিনি পরিবহন এবং জ্বালানি এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের  সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে অবিলম্বে আদানির সাথে চুক্তি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্তকারী সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে, পিটিআই ভারতের মুম্বাই থেকে রিপোর্ট করেছে যে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার খবরের পর আজ মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দামও সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। একসময় বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি আদানি হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র। সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে আদানিকে মোদীর কাছ থেকে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।

আরো জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X