December 11, 2024
‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’প্রতারণার নতুন সাইবার ফাঁদ

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’প্রতারণার নতুন সাইবার ফাঁদ

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’প্রতারণার নতুন সাইবার ফাঁদ

‘ডিজিটাল অ্যারেস্টপ্রতারণার নতুন সাইবার ফাঁদ

ডিজিটাল অ্যারেস্ট বা গ্রেফতার কি?

ডিজিটাল অ্যারেস্ট সাইবার প্রতারকদের নতুন ‘অস্ত্র’। প্রতারকরা প্রথমে একজন ব্যক্তির কাছে অডিও বা ভিডিও কল করে। তারপর তাদের ভয়ভীতি দেখায় এবং তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য তাদের কোথাও আটকে রাখে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, তারা প্রতারকদের বাড়িতে এটি করে। এটা ভারতীয় অঞ্চল থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার সংখ্যা করছে বিশেষজ্ঞরা।

অপরাধ কিভাবে সংগঠিত হয়?

প্রথম ধাপ: একজন ব্যক্তিকে ‘কুরিয়ার সার্ভিস’, ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি’ বা ‘ট্রাই’-এর মতো সংস্থার নামে ডাকা হয়। এরপর ওই ব্যক্তিকে বলা হয় যে, আপনার নামে ‘কাস্টমস’ একটি পার্সেল আটক করেছে যেখান থেকে মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। অথবা হয়তো কোনো ব্যক্তি কখনো ‘ব্লু ফিল্ম’ দেখেছেন, তাকে ডেকে বলা হয় যে ট্রাই বলছে ‘আপনি চাইল্ড পর্ণ বা শিশুদের ব্লু ফিল্ম দেখেছেন, তাই আপনাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’ কাউকে ফোন করে বলা হয় ‘আপনার নামে একাধিক প্যান কার্ড পাওয়া গেছে, যেগুলো বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।’

দ্বিতীয় ধাপ: অভিযোগ সাজানোর করার পর দ্বিতীয় ধাপে তাকে বলা হতে পারে যে, আমি আপনাকে ভিডিও কল করছি বা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি। এ বার বিদেশে কোথাও থানা বা ইডি, সিবিআই-এর মতো ভুয়ো অফিস তৈরি করে ভিডিও কল করা হয়। এফআইআর দায়ের করে ‘অ্যারেস্ট’ হবে বলে প্রতারকরা নানাভাবে ‘টার্গেট’ করা ব্যক্তির-এর মনে ভয় তৈরি করে।

তৃতীয় ধাপ:  তৃতীয় পর্যায়ে এ সমস্যা থেকে মুক্তির নামে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। প্রথম টাকা পরিশোধের পরও এই টাকা ফেরত পাবেন বলে বলা হয়, তদন্তের একটি অংশ বলে ওই টাকা ফেরত দিতে আরও চাঁদাবাজি করে প্রতারকরা।

চতুর্থ ধাপ: অনেক সময় তাঁর পরিজনের নাম করে গুরুতর কোনও অভিযোগের কথা বলা হয়। এমনকি এর সপক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রমাণ আছে বলেও দাবি করা হয়।  এক্ষেত্রে প্রতারকদের কাছে অনেক সময় ‘টার্গেটে’-এর ব্যাক্তিগত কিছু তথ্য আগে থেকেই জানা থাকে।। এরপর ভয় পেয়ে গেলে  ভিডিও কল করলে তাকে আরও বেশি ভয় দেখানো হয়। বাড়িতে ক্যামেরা থাকলে তার ‘অ্যাক্সেস’ চাওয়া হয়। জালিয়াতির পরিকল্পনাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে, একটি ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট মেমো’ও পাঠানো হয়েছে। অবশেষে সেই মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়।

ভয়ের প্রতীক হয়ে উঠছে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট গত ১০ মাসে এই প্রতারণার মাধ্যমে ভারতের সাধারণ মানুষ ২,১৪০কোটি টাকা হারিয়েছে। থাইল্যান্ড, হংকং, লাওসের মতো বেশ কয়েকটি দেশের মাধ্যমে ভারতে এই প্রতারণা চলছে। এবার প্রকাশ্যে এল মুম্বইয়ের ২৬ বছরের এক তরুণীর ঘটনা। অভিযোগ অনুসারে, প্রতারক তাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে পোশাক খুলতে বাধ্য করে এবং তার কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

পুলিশ এফআইআর অনুসারে, মেয়েটি, যে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কাজ করে, ১৯ নভেম্বর রাতে একটি ফোন কল পেয়েছিল। প্রতারক নিজেকে দিল্লির পুলিশ অফিসার হিসাবে পরিচয় দেয় এবং বলে যে, মেয়েটির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী নরেশ গোয়েলের মামলা। বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে তাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়। প্রতারকের নির্দেশে, মেয়েটিকে একটি হোটেল রুম বুক করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং সেখানে একটি ‘ভার্চুয়াল শুনানি’ করা হয়েছিল। এরপর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের নামে তার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এছাড়াও, ‘বডি ভেরিফিকেশন’-এর অজুহাতে একটি ভিডিও কলে তাকে পোশাক খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল।

তরুণী ২৮ নভেম্বর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের শনাক্তের কাজ চলছে।

সম্প্রতি ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার অপরাধের এই নতুন রূপ নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। শুধু ভারতেই ১,৭০০টি সন্দেহজনক স্কাইপ আইডি এবং ৫৯,০০০টি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল গ্রেফতারের মাধ্যমে যেভাবে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে তা বিপজ্জনক।

তাঁর কথায়, ‘প্রতারকরা ফোনে এমন পরিবেশ তৈরি করছে যে, মানুষ ভয় পাচ্ছে। ওরা বলছে এখনই কথা অনুযায়ী কাজ  কর, না হলে আরেস্ট করা হবে, আসলে পুরোটাই প্রতারণা।’ এই ধরনের ঘটনায় অহেতুক ভয় না পেয়ে মানুষকে ঠান্ডা মাথায় রাখার এবং এই ধরনের ফোন কল রেকর্ড করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

Read More

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X