এক বসায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফিলিস্তিনি মহীয়সী তরুণীর মুখস্ত কোরআন খতম
অন্ধ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে পুরো গ্রন্থকে মুখস্ত করার অনন্য রেকর্ড একমাত্র আল কুরআনের ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়েছে। দুনিয়ার ইতিহাসে অন্য কোন গ্রন্থকে এরকমরূপে ভুল ছাড়া একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর মেমোরিতে মুখস্ত সেট করে ফেলার রেকর্ড আর নেই। এবং এটাই আল কুরআনের মুজেজা বা অলৌকিকতা। এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়ে আসার সর্বোচ্চ প্রমাণের একটি। তাও আবার ফিলিস্তিনের মত যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভীষিকাময় এক অঞ্চলে। তবে হ্যাঁ সারা পৃথিবীতেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হাফেজ হওয়ার সৌন্দর্য বিরাজমান।
দক্ষিণ ফিলিস্তিনের কলকিলিয়ার হাবলহ গ্রামের ২৪ বছর বয়সী মালিক হামিদান নামক এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মহিলা অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। তিনি টানা ৫ ঘণ্টা তেলাওয়াত করে পুরো কুরআন মুখস্ত খতম করেন।
মোট ৪১জন শিক্ষার্থী তার সাথে কুরআন মুখস্থ(হিফজ ) ক্লাসে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি কুরআন মুখস্থ করার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।
মালিক হামিদান আল জাজিরাকে বলেন, “আমি যখন কুরআন শেষ করেছি, তখন আমার অনুভূতি বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দ নেই। আমি যখন ২৫ তম পাড়ায় পৌঁছেছিলাম তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম, আমি যা অর্জন করেছি তাতে আমি অভিভূত হয়েছিলাম।”
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও, নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তির কারণে মালিক হামিদানকে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি। তিনি বললেন, আল্লাহ আমার জন্য পথ সহজ করে দিয়েছেন।
তার সাফল্যে তার বাবা-মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে, মালিক হামিদান বলেন, তারা ক্রমাগত উত্সাহ এবং সমর্থন দিয়েছেন। যখনই আমি হাল ছেড়ে দিতে চাইতাম, আমার বাবা আমাকে অধ্যবসায়ের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিতেন এবং আমাকে এই যাত্রা চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করতেন।
যারা কোরআন মুখস্থ করার চেষ্টা করছেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রতিদিন একটি আয়াত মুখস্ত করুন এবং পরের দিন আরেকটি আয়াত যোগ করুন, এভাবে পুরো কোরআন মুখস্ত করা সহজ হবে।
২০২২ সালেও এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফিলিস্তিনি মহিলা এক সভায় পুরো কুরআন তেলাওয়াত করেন। ওই নারীর নাম সানা তালাল আল-রান্টিসি। তিনি গাজা উপত্যকার রাফাহ এলাকায় থাকেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সানা তালাল আল-রান্টিসির বয়স যখন ২৬, তখন তিনি শুনে শুনে পবিত্র কোরআন মুখস্ত করেছিলেন। রন্টিসি তার মোবাইল ফোনে ব্রেইল ভাষায় কুরআন মুখস্ত করার জন্য একটি অনলাইন কোর্সও করেছিলেন। অন্ধ হয়েও এই অদম্য নারী কুরআন মুখস্থ করতে দ্বিধা করেননি।
এ প্রসঙ্গে সানা তালাল বলেন, “সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য। তিনি আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তারা সেই ব্যক্তি(হাফিজদের) যাদেরকে মহান আল্লাহ বিশেষভাবে অনুগ্রহ করেছেন। তিনি আমাদের কাতারে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।”
৩৩ বছর বয়সী ওই নারী বর্তমানে স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামের শিক্ষকতা করছেন। তিনি সম্প্রতি অন্যান্য হাফিজদের সাথে পবিত্র ওমরাহ পালন করেছেন। তিনি বলেন, “এই দিনটি সত্যিই আমার জীবনের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত।”
সেই বৎসরের আগস্টে, গাজার একটি সামাজিক সংগঠন দারুল কুরআনুল কারীম নামে একটি ইভেন্ট শুরু করে যেটি এক বসায় পুরো কুরআন তেলাওয়াত করে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে শতাধিক হাফিজ অংশ নেন। সংগঠনটির পরিচালক বিলাল ইমাদ জানান, এ পর্যন্ত ৩৩২ জন পুরুষ হাফেজ ও ২৪৯ জন মহিলা হাফেজসহ মোট ৫৮১ জন অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, “এক বৈঠকে সর্বকনিষ্ঠ হাফেজ যিনি পুরো কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন তার বয়স ছিল ৯ বছর এবং সবচেয়ে বয়স্ক হাফেজের বয়স ছিল ৬০ বছর। প্রতিদিন ফজরের পর থেকে পুরো কুরআন মুখস্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়, যা সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলতে থাকে।” বিলাল ইমাদ বলেন, পবিত্র কোরআন মুখস্থ করার ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই প্রথম ফিলিস্তিনে এ ধরনের সংগঠনের আয়োজন করা হয়েছে। একজন হাফেজকে এক বৈঠকে পুরো কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য ভালোভাবে মুখস্থের অনুশীলন করতে হয়। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমও প্রয়োজন।