ব্রিকস দেশগুলো ডলারের বিকল্প চালু করলে তাদের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
ব্রিকস:
BRICS হল একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট, যা পাঁচটি প্রধান দেশের প্রথমাক্ষর দ্বারা গঠিত: ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগদানের আগে এই গোষ্ঠীটি মূলত “BRIC” নামে পরিচিত ছিল। সাউথ আফ্রিকার যোগ দেওয়ার পরে S যোগ হয়ে BRICS হয়েছে। BRICS-এ অন্তর্ভুক্ত সমস্ত দেশই উন্নয়নশীল বা নতুন শিল্পোন্নত, কিন্তু তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলি হল উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার। এর পাঁচটি দেশই G-২০ এর সদস্য। বিশ্ব অর্থনীতির ৩৭ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে এদেশগুলো।
চীন-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন এই ব্রিকস জোট বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি নতুন মুদ্রা প্রবর্তন করলে বা প্রচলিত মুদ্রার বিকল্প গ্রহণ করলে জোটের সদস্য দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১০০% শুল্ক আরোপ করবে। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, মার্কিন ডলার থেকে দূরে সরে যাওয়ার ব্রিকস দেশগুলোর প্রচেষ্টা আর বরদাস্ত করা হবে না। আমরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে, তারা একটি নতুন ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না এবং ডলারের বিকল্প কোন মুদ্রা সমর্থন করবে না। অন্যথায়, তারা ১০০% শুল্কের মুখোমুখি হবে এবং মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবে।
অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে এক বৈঠকে সদস্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক লেনদেনে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহারের ওপর জোর দেয়। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন তারা।
BRICS জোট ২০১১ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা গঠিত হয়েছিল। এ বছর নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া ও মিশর। দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পান্দর বলেছেন, ৩৪টি দেশ জোটে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগ্রহী দলের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ২০২৩ সালে BRICS-এর জন্য একটি সাধারণ মুদ্রা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছিলেন।
যদি ব্রিকস তার নিজস্ব মুদ্রা এবং ডলারের বাইরে একটি ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, রাশিয়া, চীন এবং ইরানের মতো দেশগুলি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি এড়াতে সক্ষম হবে। তবে জোটের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে যে কোনো সময় শিগগিরই নতুন মুদ্রা চালুর সম্ভাবনা কম।
চীন ও রাশিয়ার জন্য ব্রিকস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা জোটটিকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখে। রাশিয়া বর্তমানে ব্রিকসের চেয়ারম্যান পদে রয়েছে।
গত অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যে, পশ্চিমা দেশগুলি বিশ্বে একা এবং “বিশ্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ” দেশগুলি তাদের উদ্যোগকে সমর্থন করে।
ট্রাম্পের সর্বশেষ অর্থনৈতিক হুমকি এসেছে যখন তিনি প্রথম দিন থেকে মেক্সিকো, কানাডা এবং চীন থেকে আমদানির উপর বড় শুল্ক ঘোষণা করেছেন, অবৈধ অভিবাসন, “অপরাধ এবং মাদক পাচার” রোধ করার উপায় হিসাবে এই পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ বলেছেন যে, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা পশ্চিমা দেশগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে, ব্রিকস জোট বিশ্ব অর্থনীতির ৩৭ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
তিনি দাবি করেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক তাদের মূল কাজগুলো করছে না। সংস্থাগুলো ব্রিকস দেশগুলোর স্বার্থে কাজ করছে না বলেও অভিযোগ করেন রুশ মন্ত্রী।
২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিমায়িত করা হয়েছে, যার ফলে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মস্কো।
২০১৫ সালে, ব্রিকস দেশগুলি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, যার উদ্দেশ্য হল ব্রিকস সদস্য এবং অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির জন্য অবকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করা। যাইহোক, রাশিয়ার নতুন আহ্বান ইঙ্গিত দেয় যে এই দেশগুলি আরও কার্যকর আর্থিক কাঠামো তৈরির দিকে এগিয়ে যেতে চায় যা তাদের পশ্চিমা প্রভাব থেকে মুক্ত করবে।
আরো জানতে