শহীদ নাফিজের দেহ বহনকারী সেই রিকশাটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে
অকাতরে জীবন দেওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখেছে পৃথিবী। যা বাংলাদেশের তরুণরা এক দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। যে যুবকদের জীবন সবে মাত্র শুরু হয়েছিল তারাও অত্যাচারীর অত্যাচারের সামনে জীবন বাজি রেখে দেশকে রক্ষার আন্দোলনে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি। কোটি কোটি তরুণের দল বুক পেতে ছিল শহীদ হওয়ার প্রত্যাশায়। সেই শহীদদের অগ্রযাত্রায় মস্তকে দেশের পতাকা ধারণকারী গোলাম নাফিজ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ গোলাম নাফিজের মরদেহ বহনকারী রিকশাটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা হবে। বৃহস্পতিবার গণভবনে নাফিজের মরদেহ বহনকারী রিকশা দেখতে এসে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
গণভবনে রিকশা হস্তান্তরের সময় উপদেষ্টা রিকশাচালক নূর মোহাম্মদকে তার সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন।
গত ৫ নভেম্বর একটি সংবাদমাধ্যম ‘নাফিজের নিথর দেহ পড়ে থাকা রিকশাটি বিক্রি করে দিয়েছেন নুরু’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। পরে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অবিলম্বে রিকশা ও রিকশাচালককে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।
উপদেষ্টার নির্দেশে রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ ওরফে নূরুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লন্ডন প্রবাসী আহসানুল কবির সিদ্দিকী কায়সারের কাছে তিনি ৩৫ হাজার টাকায় রিকশা বিক্রি করেছেন। পরে আহসানুল কবির সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিকশাটি জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে হস্তান্তরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রিকশাটি জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রধান উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফার্মগেটের পথচারী-সেতুর নিচে গুলিবিদ্ধ হন বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র গোলাম নাফিজ। পুলিশ যখন নাফিজকে রিকশার পায়ে গুলি করে, তখনও নাফিজ রিকশার রড হাতে ধরে ছিল। রিকশাচালক তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তিনি আর বাঁচেননি। পরে এই রিকশার ছবি সারা বাংলাদেশকে কাঁদায়।
গত ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর ফার্মগেটের ফুটব্রিজের নিচে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নাফিজ। রিকশার পাদানিতে তার পতাকাবাঁধা মাথা এক পাশে ঝুলে আছে, আরেক পাশে নিস্তেজ পা দুটি ঝুলছে। রিকশার চেইনের সঙ্গে পেঁচিয়ে যাচ্ছিল বলে নাফিজের হাত রিকশার রডের সঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছিলেন নুরু। গুলিবিদ্ধ নাফিজকে রিকশার পাদানিতে তুলে দেওয়া হয়। নাফিজ তখনও রড ধরে ছিল। তখন চারদিকে মারমুখী পুলিশ। গুলির বৃষ্টি যেনো হচ্ছিল। ওই অবস্থায় নাফিজের নিথর দেহ নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে যান নুরু।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই মুহূর্তের কিছু ছবি তুলেছেন মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। নাফিজের তোলা ছবি (৪ আগস্ট দুপুর ১২টার পর) দেখে তার বাবা-মা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ছেলের লাশ দেখতে পান।
নাফিজ রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি জিপিএ- ৫ সহ পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরিবার নিয়ে মহাখালীতে থাকতেন। তারা দুই ভাই, নাফিজ ছিলেন ছোট।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে হল একটি প্রস্তাবিত স্মৃতি জাদুঘর যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ঐতিহাসিক গণভবনে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের পঞ্চম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এটি মিরপুর রোডের পশ্চিম পাশে এবং লেকস রোডের ক্রসিংয়ে অবস্থিত এবং জাতীয় সংসদ ভবন থেকে পাঁচ মিনিটের পথ। এই এলাকাটি ঢাকার সবচেয়ে নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকার একটি।
আরো পড়ুন