November 24, 2024
ব্যাংক থেকে ১৭ বিলিয়ন (১৭০০ কোটি) ডলার লুট করেছে হাসিনার দোসর ধনকুবেররা

ব্যাংক থেকে ১৭ বিলিয়ন (১৭০০ কোটি) ডলার লুট করেছে হাসিনার দোসর ধনকুবেররা

ব্যাংক থেকে ১৭ বিলিয়ন (১৭০০ কোটি) ডলার লুট করেছে হাসিনার দোসর ধনকুবেররা

ব্যাংক থেকে ১৭ বিলিয়ন (১৭০০ কোটি) ডলার লুট করেছে হাসিনার দোসর ধনকুবেররা

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত পলাতক সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বন্ধু দোসর বা ধনকুবেররা বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৭ বিলিয়ন (১৭০০ কোটি) মার্কিন ডলার লুট করেছে। আর এ কাজে তারা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা পেয়েছে।

বাংলাদেশি মুদ্রায় লুটপাটের পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এ তথ্য জানিয়েছেন। সোমবার (২৮ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রধান, শেখ হাসিনার সরকারের সাথে যুক্ত দোসরদের বিরুদ্ধে তার শাসনামলে ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের জন্য দেশের শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাথে কাজ করার অভিযোগ করেছেন।

ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান আহসান মনসুর। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলো জোরপূর্বক দখলে সহায়তা করেছে।

মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলো দখলের পর প্রায় ২ ট্রিলিয়ন টাকা বা ১ হাজার ৬৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লুট হয়েছে। নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ দেওয়া এবং ব্যাংক দখলের পর আমদানি চালান স্ফীত করার মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, “যেকোনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটিই সবচেয়ে বড়, সর্বোচ্চ ব্যাংক লুটপাট। বিশ্বের আর কোথাও এই পরিমাণে লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি এবং এর পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল এবং গোয়েন্দারা (ব্যাংকের সাবেক সিইওদের) মাথায় বন্দুক না ধরলে এটি ঘটতে পারত না।”

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন যে এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার সহযোগীরা ডিজিএফআই-এর সহায়তায় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে “ন্যূনতম ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিনিয়ে নিয়েছে। প্রতিদিনই তারা নিজেদেরকে ঋণ দিতো।”

তবে সাইফুল আলমের পক্ষে আইন সংস্থা কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভানের এক বিবৃতিতে এস আলম গ্রুপ বলেছে, আহসান মনসুরের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, “এস আলম গ্রুপ এবং বাংলাদেশের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যবসার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বিত প্রচারাভিযান যথাযথ প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিগুলিকেও সম্মান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে ভূমিকা রেখেছে। গ্রুপের রেকর্ড এবং অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা গভর্নরের অভিযোগগুলিকে আশ্চর্যজনক এবং অযৌক্তিক বলে মনে করি…”

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া শাখা আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর সাথে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এছাড়াও DGFI এর সাথে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়নি।

১৮ কোটি  মানুষের দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশে শেখ হাসিনা মোট দুই দশক ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। কিন্তু ভোট কারচুপি, জেল-জুলুম, বিরোধীদের নির্যাতন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তার শাসন নষ্ট হয়ে গেছে। ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতে পালিয়ে যান এবং তার বর্তমান অবস্থান জানা যায়নি।

হাসিনার পলায়নের পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে এই সরকার হাসিনার বন্ধুদের লুটপাট ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর এর আগে গত মাসে এফটিকে বলেছিলেন যে, তিনি শেখ হাসিনার মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, হাসিনার শাসনামলে নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলোর পর্ষদ সদস্যদের টার্গেট করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, , “বোর্ডের সদস্যদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হোটেলের মতো অন্যান্য স্থানে নিয়ে যায় এবং বন্দুকের মুখে তাদের ব্যাংকের সমস্ত শেয়ার এস আলমের কাছে বিক্রি করতে এবং তাদের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলত। একের পর এক ব্যাংকে তারা এটা করেছে।”

বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের একজন প্রাক্তন সিইও এফটিকে বলেছিলেন যে জোরপূর্বক ব্যাঙ্ক টেকওভারের অংশ হিসাবে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তিনি তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টদের চাপে ছিলেন।

মান্নান বলেছিলেন যে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একটি বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়ার পথে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং পরে একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য একটি কার্যদিবস বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

মান্নানকে গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি বলেন,“তারা ভুয়া স্টেশনারি নিয়ে ব্যাংকের চিঠি তৈরি করে। আমাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।”

যাইহোক, এস আলম গত এক দশকে ব্যাংকিংয়ে বৈচিত্র্য এনেছেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সহ সাতটি ব্যাংকে “উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ” করার দাবি করেছেন, যা গ্রুপের ওয়েবসাইট দাবি করছে।

মনসুর বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া প্রায় ডজন খানেক ব্যাংকের অডিট সম্পন্ন করে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, “আমরা সেই অডিটটিকে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় উভয় আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই।”

আরও পড়তে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X