স্বৈরাচারদের প্রতি উদারতার কোনো প্রশ্নই আসে না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্র গোলাম নাফিজের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি ভবনের নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ড
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্র গোলাম নাফিজের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি ভবনের নাম ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
স্বৈরাচারদের প্রতি উদারতা দেখানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং পৃথিবীর বুকে নিদর্শন হয়ে থাকে, এমন কঠোর শাস্তি তাঁদের দিতে হবে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনো সরকারের ভেতর থেকে পরিকল্পনা করছে। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। স্বৈরাচারী শাসক ও তাদের দোসরদের এমন কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে যা পৃথিবীর বুকে একটি নিদর্শন হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের গুলি করার পরিণতি কী, মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং একটি স্বৈরাচারের স্থায়ীত্ব যা পৃথিবীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্র গোলাম নাফিজের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি ভবনের নামফলক উন্মোচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, এমন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই যেখানে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রতিফলিত হবে, যে বাংলাদেশে আর কখনোই স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে একাত্তরে, নব্বইয়ে রক্ত দিয়েছি। নব্বইয়ে রক্ত দেওয়ার ৩০ বছর পরেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। বারবার কি আমরা রক্ত দেব? দেশের মানুষের সঙ্গে কি বারবার প্রতারণা করা হবে?’
গোলাম নাফিজ সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে দেশবাসীকে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের চিত্র এমনই ছিল। কিন্তু পুলিশকে ব্যবহার করে, হামলা-মামলা-নিপীড়ন করেও স্বৈরাচারী সরকারের শেষ রক্ষা হয়নি। ছাত্ররা এদেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। ছাত্ররা সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। শহীদ গোলাম নাফিজ সেই সাহসীদের একজন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নাফিজ রিকশায় শুয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা দেওয়া হয়। নাফিজের মতো অন্য শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ।
শহীদ নাফিজসহ অন্যান্য শহীদরা এই আন্দোলনের নির্মাতা ও রূপকার বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন,‘শিক্ষার্থী ও জনগণের অভ্যুত্থানের ফলেই এই বাংলাদেশের সৃষ্টি। এই অভ্যুত্থানকে কোনো দলীয়, গোষ্ঠী ও ব্যক্তির জায়গা থেকে যেন ব্যাখ্যা না করি। স্বাধীনতাসংগ্রামকে একটি দলীয় ঘটনা হিসেবে আওয়ামী লীগ ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা করেছে। এমন ভুল যাতে আমরা না করি। এ অভ্যুত্থান কোনো দলের, কোনো গোষ্ঠীর মতের নয়। এই অভ্যুত্থান দেশের সব মানুষের।’
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, শিগগিরই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তহবিলে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে নিহত ও আহতদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু হবে। বিশেষভাবে আহতদের দ্রুত বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, আমি ঘুমাতে পারি না। গুলিবিদ্ধ হয়ে নাফিজ যখন রিকশায় শুয়ে ছিলেন, সেই ছবি বারবার ভেসে ওঠে। তিনি কোনো দলের সঙ্গে ছিলেন না, ক্ষমতার স্বার্থে আন্দোলনেও যোগ দেননি। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমার ছেলে শহীদ হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মশিউর রহমান, আন্দোলন শহীদ মীর মুদ্দার ভাই জুলি শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক স্নিগ্ধা, বনানী ছাত্র সমিতির প্রতিনিধি মাফরাজ হোসেন ও ছাত্র হাসিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। ঘটনা অনুষ্ঠান শেষে বনানী বিদ্যানিকেতন ভবনের ইংরেজি সংস্করণের নামকরণ করা হয় গোলাম নাফিজের নামে।
1 Comment