কিডনি রোগের লক্ষণ
বর্তমানে মানুষ যেসব রোগে মারা যাচ্ছে তার মধ্যে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা অন্যতম। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ মানুষ কিডনি রোগে মারা যায়। কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। তারা প্রায়ই শেষ অবলম্বনে ডাক্তারের কাছে আসে, যখন আর কিছু করার থাকে না।
আপনার কিডনি রোগ আছে কিনা তা জানতে নিচের প্রশ্নগুলোর হ্যাঁ বা না উত্তর দিন। যদি বেশিরভাগ উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে দেরি না করে আজই একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন এবং আপনার কিডনির অবস্থা পরীক্ষা করুন।
কিডনি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। অবস্থা খুব জটিল না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলি ভালভাবে প্রকাশ করা হয় না। তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা জরুরি।
প্রস্রাবের পরিবর্তন
কিডনি রোগের একটি প্রধান লক্ষণ হল প্রস্রাবের পরিবর্তন। কিডনির সমস্যা থাকলে প্রস্রাব কম-বেশি হয়। বিশেষ করে রাতে এই সমস্যা বাড়ে। প্রস্রাবের রং গাঢ় হয় । অনেক সময় প্রস্রাব করার তাড়না অনুভূত হলেও প্রস্রাব বের হয় না।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা
প্রস্রাবের সময় ব্যথা কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া- এগুলো মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ। এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে জ্বর ও পিঠে ব্যথা হয়।
প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
প্রস্রাবে রক্ত থাকলে তা খুবই বিপজ্জনক। এই ক্ষেত্রে, অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
শরীরে ফুলে যাওয়া
কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। কিডনির অসুখ হলে এই অতিরিক্ত পানি বের করা কঠিন। অতিরিক্ত পানি শরীরে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাওয়া গুরুতর কিডনি রোগ নির্দেশ করে। কিডনি রোগের কারণে রক্তচাপ বেড়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে তরল পদার্থ জমে এবং ফুলে যায়।
কাজে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা
লোহিত রক্ত কণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। এতে কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সবকিছু ভুলে যাওয়া
কিডনি রোগের কারণে মস্তিষ্ক যথেষ্ট অক্সিজেন না পেলে চিন্তাভাবনা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। কিছু মনে রাখা বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হওয়া কিডনির সমস্যার লক্ষণ।
সবসময় ঠান্ডা বোধ
কিডনি রোগের ক্ষেত্রে, গরম আবহাওয়াতেও ঠান্ডা অনুভূত হয়। আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও হতে পারে।
ত্বকে ফুসকুড়ি
যখন কিডনি ব্যর্থ হয়, তখন বর্জ্য পদার্থ রক্তে জমা হয়। এটির কারণে ত্বকে চুলকানি এবং ফুসকুড়ি হতে পারে।
বমি বা বমি বমি ভাব
রক্তে বর্জ্য পদার্থ বৃদ্ধির কারণে কিডনি রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
পিঠে ব্যথা
কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়। পিঠের পাশে ব্যথা আছে। এটিও কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ।
সবসময় ক্লান্ত বোধ করেন?
কিডনি দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগে এটি দেখা যায়। মাঝে মাঝে ক্লান্ত বোধ করা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যদি সব সময় এক ধরনের দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করেন তাহলে তার মানে আপনার কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না।
শ্বাস কষ্ট হয়
কিডনি রোগের কারণে শরীরে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে ফুসফুসেও বর্জ্য জমে। এটি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে খুব কঠিন করে তোলে।
ছোট শ্বাস
কিডনি রোগের কারণে ফুসফুসে তরল জমা হয়। এ ছাড়া কিডনি রোগেও শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এগুলোর কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তাই অনেকেই ছোট করে শ্বাস নেন।
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়?
কিডনি রোগের কারণে শরীরে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়।
সুস্বাদু খাবারও অখাদ্য মনে হয়?
কিডনি রোগের কারণে খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণে সমস্যা হয়। এতে সুস্বাদু খাবারও অখাদ্য বলে মনে করতে পারে।
কখনও কখনও অজ্ঞান?
কিডনি রোগের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা কম হলে কখনও কখনও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যাইহোক, এই লক্ষণ কিডনি রোগের একটি অত্যন্ত গুরুতর লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
আরো পড়ুন