রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ড. ইউনূসের বৈঠক
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত জুলি বিশপ এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার প্রস্তাবও দিয়েছেন ড. ইউনুস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
ড. ইউনূস উল্লেখ করেছেন যে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সহানুভূতি দেখিয়েছে, তবে পরিস্থিতির সাথে জড়িত সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত খরচ যথেষ্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার সীমায় পৌঁছেছে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই চলমান সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, রোহিঙ্গাদের পরম মমতায় আতিথ্য করা সত্ত্বেও ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ এই ইস্যুতে উচ্চ আর্থ-সামাজিক-পরিবেশগত মূল্য দিতে হচ্ছে। “এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহ্যগত এবং অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে উঠেছে,” । আমাদের নিজেদের উন্নয়ন অনেকটাই ঝুঁকির মুখে। স্পষ্টতই, বাংলাদেশ তার সীমায় পৌঁছেছে, তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই এই দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটের একমাত্র সমাধান, যদিও বাংলাদেশ মানবিক দিক থেকে বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি রোহিঙ্গা জনগণের মর্যাদা ও নিরাপত্তা ও অধিকার সমুন্নত রাখতে সকল স্টেকহোল্ডারের সাথে কাজ করার জন্য আমার সরকারের পূর্ণ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের অপেক্ষায় আছি।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার প্রস্তাবও দিয়েছেন ড. ইউনুস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
বৈঠকে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনটি প্রস্তাব দেন। এগোলো হল-
এক. জাতিসংঘের মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি সর্ব-স্টকহোল্ডার সম্মেলন আহ্বান করতে পারেন। সম্মেলনে সংকটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উদ্ভাবনী ও প্রগতিশীল উপায়ের পরামর্শ দেওয়া উচিত।
দুই. জাতিসংঘ ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাকে শক্তিশালী করতে হবে। স্লাইডিং ফান্ডিং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে আরও রাজনৈতিক চাপ দিতে হবে।
তিন. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যামূলক অপরাধ মোকাবেলায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা। আমি আইসিসিতে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রসিকিউটর করিম খানের কাছ থেকে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছি। সামরিক জান্তা দ্বারা সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিকার করা মিয়ানমারের দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও নিরাপত্তার চাবিকাঠি।
অধিবেশন চলাকালীন ডাঃ ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন, যেখানে বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্ক জোরদার এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, বাইডেন বাংলাদেশ সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়েছে।
ইউনূস সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন বলে জাতিসংঘ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে ড.
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আয়োজক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া ডিনার পার্টিতে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও অংশ নেবেন। এটি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছে ‘মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট’-এর বিশাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।