অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ, প্রতিবছর ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ
অনিরাপদ খাদ্য:
মূলত, বাসি, দূষিত, ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত খাবারই অনিরাপদ খাদ্য। দেশে খাদ্যে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানোর প্রবণতা বেশি থাকায় এসব খাবার খেয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং এর ফলে বহু মানুষ মারাও যাচ্ছে।
প্রতি বছর ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের কারণে অসুস্থ হয়। বিশ্বে প্রতি বছর, ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়। তাদের মধ্যে ৪ কোটি এরও বেশি মারা গেছে। একই কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৪০ শতাংশ শিশু অসুস্থ হয় এবং ২৫ হাজার শিশু মারা যায়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ মন্ডল বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে মারা গেছে ৪ কোটি মানুষ। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বিএফএসএ’র নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত গবেষণা প্রি-নোটিফিকেশন সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
কর্তৃপক্ষের জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। আরও বক্তব্য রাখেন কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক মো. সহদেব চন্দ্র সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আহসান হাবীব।
বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪ নম্বরে। তাই গবেষণার মাত্রা বাড়াতে হবে। কর্তৃপক্ষকে আমাদের গবেষণার সময়সীমা পরিবর্তন করতে হবে, যেখানে আমাদের এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে।
ডাঃ মোঃ আহসান হাবীব বলেন, মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিক ব্যবহারের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা নদী ও সাগরে ছড়িয়ে পড়ছে। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাবার নিয়ে গবেষণাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বক্তার বক্তব্যে ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, মানুষকে নিরাপদ খাদ্য প্রদানও একটি ইবাদত। এর আগে ১৩ টি দুধের নমুনার মধ্যে ১1টিতে ভারী পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল। এটির উপর কাজ করাই এর থেকে বেরিয়ে আসার উপায়। তিনি বলেন, বর্তমানে ১০টি গবেষণার অর্থায়ন করা হচ্ছে। আশা করি দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় বড় অবদান রাখবে। খাবারকে আকর্ষণীয় করতে রাস্তার খাবারে বিভিন্ন রং ব্যবহার করা হয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ডাঃ শারমিন রুমি আমিন বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম প্রিয় খাবার পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাত্রা এত বেশি যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এক রোগের ওষুধ খেলে অন্য রোগ দেখা দেয়।
ডাঃ এস কে আরিফুল হক বলেন, স্কুলের সামনে বিক্রি করা আচার ও ফুসকাসহ যেসব খাবার খেলে শিশুরা ডায়রিয়া হয়।
ডাঃ মোঃ আব্দুল মাসুম বলেন, দেশে পশু মোটাতাজাকরণে স্ট্রেইট ওষুধ ব্যবহার না হলেও খামারিরা ব্যবহার করছেন। চাষিরা প্রথমে স্বীকার না করলেও পরে জানান তারা হলুদ বা গোলাপি বড়ি ব্যবহার করেছেন। আর এসব মাদক সীমান্ত এলাকায় বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ এগুলো সহজেই ভারত থেকে পাচার হয়ে দেশে চলে আসে। তিনি বলেন, আমরা স্টেরয়েড ব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরতে পশুর রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করব।
ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুডের দোকান বেশি। ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ফাস্টফুড খায়। তাদের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের খাবার বেশি খায়। এই তৈলাক্ত খাবারগুলো জিভে থাকে ভিন্ন স্বাদ। এতে করে প্রতিবেশীরা এসব খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমরা তখন অন্য খাবার পছন্দ করি না বা করতে পারিনা। সেমিনারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন