বিটা কেরোটিন কী? উপকারিতা
বিটা ক্যারোটিন:
বিটা ক্যারোটিন (β ক্যারোটিন) হল একটি জৈব পদার্থ যা পিঙ্গলবর্ন ছত্রাক গাছপালা এবং ফলের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি ক্যারোটিন গ্রুপের সদস্য, যা জৈব রাসায়নিকভাবে টেরপেনয়েড এবং আটটি আইসোপ্রিন ইউনিট থেকে সংশ্লেষিত হয়, তাই এতে ৪০ টি কার্বন রয়েছে। ক্যারোটিনগুলির মধ্যে,বিটা-ক্যারোটিনকে অণুর উভয় প্রান্তে বিটা-রিংগুলির উপস্থিতি দ্বারা আলাদা করা হয়। ক্যারোটিন জৈবভাবে জেরানাইলজেরানাইল পাইরোফসফেট থেকে সংশ্লেষিত হয়।
বিটা-ক্যারোটিন হল এক ধরনের পিগমেন্ট যা সবজিতে থাকে এবং তাদের লাল, হলুদ এবং কমলা রঙ দেয়। এটি এক ধরণের প্রোভিটামিন এ ক্যারোটিনয়েড, যার অর্থ আমাদের শরীর এটিকে রেটিনলে (ভিটামিন এ) রূপান্তর করতে পারে। ১৮৩১সালে, হেনরিখ ফার্নান্ড ওয়াকেনরোডার নামে একজন বিজ্ঞানী গাজরের মূল থেকে এই বিটা-ক্যারোটিন আবিষ্কার করেন এবং গাজরের ইংরেজি নাম ক্যারোট অনুসারে এর নামকরণ করেন, বিটা-ক্যারোটিন।
কোন খাবারে পাওয়া যাবে বিটা ক্যারোটিন
আমাদের চারপাশে বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ অনেক ফল ও সবজি রয়েছে এবং দামও নাগালের মধ্যে। বিটা-ক্যারোটিন প্রায় সব রঙিন ফল ও সবজিতেই থাকে। গাজর আমাদের বিটা ক্যারোটিনের সবচেয়ে পরিচিত উৎস। এছাড়াও ব্রকলি, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, শালগম, মটরশুটি, বাঁধাকপি, লাল ও হলুদ ক্যাপসিকাম, পার্সলে, লেটুস, স্কোয়াশ ইত্যাদি সবজিতে বিটা ক্যারোটিন থাকে। আমাদের দেশীয় ফলের মধ্যে আম, তরমুজ, পাকা বরই, বাঙ্গি , স্ট্রবেরি ইত্যাদিও বিটা ক্যারোটিনের অংশ। এই ফল ও শাকসবজিকে উচ্চ তাপে রান্না করার পরিবর্তে অল্প আঁচে সামান্য রান্না করা হয় বা সম্ভব হলে কাঁচা খাওয়া হয় তাহলে উত্তম ।
বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার কেন খাওয়া উচিত?
বিটা-ক্যারোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা আমাদের শরীরকে রোগমুক্ত এবং তারুণ্য ধরে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে বিটা ক্যারোটিন রোগ দমন করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে:
বিটা ক্যারোটিন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবারের নিয়মিত ব্যবহার মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমাতে পারে। এটি আলঝেইমার, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়। শুধু তাই নয়, রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ফুসফুস ভালো রাখে:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতাও কমে যায়। বিটা ক্যারোটিনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুসের স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা বজায় রাখে।
ত্বক সুস্থ রাখে:
বিটা ক্যারোটিনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে সুস্থ রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বককে বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ:
যারা প্রতিদিন বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান তাদের হার্টের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি কমে যায়। বিটা-ক্যারোটিন ভিটামিন ই-এর মতো কাজ করে, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে।ফলস্বরূপ, এথেরোস্ক্লেরোসিস এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
গবেষণায় দেখা গেছে, বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
বিটা-ক্যারোটিন নিজেই এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে এবং ক্ষতিকারক ভাইরাস ব্যাটকেরিয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ:
যারা বেশি বিটা-ক্যারোটিন অর্থাৎ ক্যারোটিনয়েড খান তাদের স্তন, কোলন এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। ক্যারোটিনয়েড তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিটা-ক্যারোটিন ক্যান্সার কোষ গঠনেও বাধা দেয়।
চোখকে ক্ষতি থেকে রক্ষা:
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে বয়সজনিত চোখের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কমে যেতে পারে।বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসের সিস্টেম উন্নতি:
বেশি করে বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি খাওয়া ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং এম্ফিসেমার মতো বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ করে।