November 24, 2024
ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজনীতিতে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজনীতিতে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজনীতিতে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজনীতিতে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশে হাসিনার পলায়নে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত সেভেন সিস্টার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তৃতার পর এটি ভাইরাল হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে নোবেল বিজয়ী বলেন, ‘কেউ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে চারদিকে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার, পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্রই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে।

মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্য সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত। ভারতের মোট ২৮ টি রাজ্য এবং ভারতের কেন্দ্র শাসিত রাজ্য ৫টি। অরুণাচল , আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত। সেভেন সিস্টারস এর ৪টি রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। তা হল আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা।

ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাদেশ এবং এই রাজ্যগুলির জনগণ একটি অভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা এবং উপজাতি জীবন ভাগ করে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, আসাম এবং মেঘালয়ের সাথে সিলেটের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত মিল রয়েছে।

সেভেন সিস্টারস:

অরুণাচল

অরুণাচল রাজ্য উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এটি দক্ষিণে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে ভুটান, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে চীন এবং পূর্বে মায়ানমার দ্বারা সীমাবদ্ধ। অরুণাচল প্রদেশের আয়তন ৮৩,৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এবং এর রাজধানী হল ইটানগর। অরুণাচল প্রদেশ চীনের তিব্বতের সাথে ১১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে।

আসাম

১৮২৬ সালে ইয়ান্দাবু চুক্তির মাধ্যমে আসাম প্রথম ব্রিটিশ ভারতের সাথে যুক্ত হয়। তবে স্বাধীনতার পর আসাম রাজ্য পুনর্গঠন করা হয়। ভূমি অসম (অমসৃণ) হওয়ায় রাজ্যটিকে বলা হয় আসাম, পরে আসাম। এটি ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর এবং অরুণাচল প্রদেশ দ্বারা বেষ্টিত। এর আয়তন ৭৮,৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার।আসাম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান এবং বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।

মেঘালয়

শিলং মেঘালয়ের রাজধানী। এটি ভারতের ২১ তম রাজ্য। এর আয়তন ২২৪২৯ বর্গ কিলোমিটার। গারো পাহাড়, খাসি পাহাড়, জৈন্তিয়া পাহাড় এই রাজ্যের সংমিশ্রণ। ১৯৭০ সালে আসামের দুটি জেলাকে আলাদা করার পর মেঘালয়ের জন্ম হয়। ১৯০৫  সালের ১৬  অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের সময়, মেঘালয় পূর্ববঙ্গ এবং আসামের একটি নতুন প্রাদেশিক অংশ হিসাবে স্বীকৃত হয়।

মিজোরাম

আইজল মিজোরামের রাজধানী। এটি উত্তর ও দক্ষিণ লুসাই পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত। এর আয়তন ২১,১৮৭ বর্গ কিলোমিটার। এটি দেশের ২৩ তম রাজ্য।

মিজোরাম প্রায় ৭২২ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত।

নাগাল্যান্ড

রাজ্যের রাজধানী কোহিমা, এবং বৃহত্তম শহর ডিমাপুর। এই রাজ্যের আয়তন ১৬,৫৭৯ বর্গকিলোমিটার। এটি ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্যগুলির মধ্যে একটি।

ভারতের স্বাধীনতার আগের দিন, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নাগারা তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। ১৯৫১ সালের মে মাসে নাগাল্যান্ডে একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এটি নাগাদের স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদর্শন করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সমর্থন করেনি। যাইহোক, ১৯৬৩ সালে, আসাম থেকে আলাদা হয়ে ভারতের ১৬  তম রাজ্য হিসাবে নাগাল্যান্ড গঠিত হয়েছিল।

ত্রিপুরা

ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য হল ত্রিপুরা, যার আয়তন ১০,৪৯১ কিমি। আগরতলা এই রাজ্যের রাজধানী।এটি পূর্বে আসাম ও মিজোরাম রাজ্য এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত।

মণিপুর

ইম্ফল মণিপুরের রাজধানী। এর আয়তন প্রায় ২২,৩২৭ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে, রাজধানীকে পূর্ব ইম্ফল এবং পশ্চিম ইম্ফল নামে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর মণিপুর সংবিধান আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি মণিপুর একটি পূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে।

এই সাতটি রাজ্য অন্য রাজ্যের ভূমি দ্বারা বেষ্টিত। ফলস্বরূপ, এই রাজ্যগুলি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে মাত্র ৬০ কিলোমিটারের একটি সরু পথ দিয়ে সংযুক্ত। একে বলা হয় চিকেন নেক করিডোর। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত। কিন্তু এই পথ দিয়ে যোগাযোগ সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। ফলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এই সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সড়ক, রেল ও সমুদ্র ট্রানজিট স্থাপনে ভারত বিশেষভাবে আগ্রহী। তবে বিশ্লেষকদের দাবি, এ ধরনের ট্রানজিট ভারতের স্বার্থ হাসিল করলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির বিবেচনায় খুব একটা সুফল বয়ে আনবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত কোনো পরাশক্তির রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার না করা এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এ বিষয়ে একটি ভুল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ মাথায় রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরো জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X