‘ঘুষ চাইলেই ঘুষি’ সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের স্লোগান
হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর তাদের সমর্থন দিচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তরুণ স্বপ্নদ্রষ্টা। ‘ঘুষ চাইলে ঘুষি ‘ স্লোগান নিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে মাঠে নেমেছে তারা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারও নতুন দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখছে শিক্ষার্থীরা। দুর্নীতিমুক্ত ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় প্রতিটি শিক্ষার্থীরই রয়েছে। বিভিন্ন সড়ক পরিষ্কারের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের কাজও করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্কাউট সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন সচেতন নাগরিকরা। শিক্ষার্থীরা শুধু রাস্তা পরিষ্কার করে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে না। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতাল ও ভূমি অফিসকে দালাল ও ঘুষমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শনিবার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কয়েকজন দালালকে বের করে দেন তারা।
মাইকিং ছাড়াও কাউকে চাঁদা না দিতে রাস্তায় সাইনবোর্ড এঁকে জনগণকে সচেতন করছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকালে দোহার ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, দোহার থানা মোড়, কলেজ মোড়, কার্তিকপুর বাজার, লতাখোলা বাজার, করম আলী মোড়, জয়পাড়া ওয়ান ব্যাংক মোড়, বাঁশতলা, পালমগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ সদর চৌরঙ্গী, বাগমারা বাজার, বান্দুরা ব্রীজ মোড়। বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচলের কাজ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন বাজারে মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের কাউকে চাঁদা না দেওয়ার আহ্বান জানান। সেই সাথে শিক্ষার্থীরা সকলকে যত্রতত্র ময়লা না ফেলা এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ জানান। বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা দুই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়কে‘পানি লাগবে পানি’, ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনবো’, ‘ঘুষ চাইলেই ঘুষি’ প্রভৃতি বিভিন্ন সচেতনতামূলক লেখা লিখে মানুষকে সচেতন করছে। শিক্ষার্থীদের এমন কাজে খুশি সাধারণ মানুষ। তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ।
আতিক, নবীন, নিঝুমসহ প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী বান্দুরা সেতুর যান চলাচলের কাজে ব্যস্ত। তারা বলেন, আজ আমি বান্দুরা বাজারের ব্যবসায়ীদের বলেছি কাউকে চাঁদা না দিতে। কিছুক্ষণ পর ভূমি অফিসে যাব। শিক্ষার্থীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা হলো, ভূমি অফিসসহ প্রতিটি অফিসকে দালালমুক্ত করতে হবে। এছাড়া কাজের বিনিময়ে কেউ ঘুষ চাইলে তাকে ঘুষি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাত ধরে নবাবগঞ্জের প্রতিটি সেক্টর ঘুষ ও দালালমুক্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তারা আরও বলেন, প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা সরকারের কাছ থেকে বেতন পান। তাহলে তারা ঘুষ নেবে কেন? বিশেষ করে ভূমি অফিস ঘুষের আখড়া। ভূমি অফিসে অনেক বেসরকারি কর্মকর্তাকে দেখা যায়। তাদের কাজ কি? কে তাদের বেতন দেয়? এগুলোও আমরা দেখব। আজ ও কাল আসব যদি অফিসে কোনো দালাল দেখা যায় এবং কোনো কর্মকর্তা ঘুষ চায় তাহলে তাকে নবাবগঞ্জ ছাড়তে হবে।
দোহার পালমগঞ্জ বাজারে ‘ঘুষ চাইলেই ঘুষি, ট্রাফিক আইন মেনে চল’সহ বিভিন্ন স্লোগান সড়কে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। লেখালেখিতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা বলেন, শুধু স্বাধীন হলেই হবে না, স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। যে কোনো সরকারি অফিসে যান, ঘুষ ছাড়া কাজ সম্ভব নয়। আমরা এটি পরিবর্তন করার জন্য সেট আউট. এখন থেকে কোনো কর্মকর্তা বা দালাল ঘুষ চাইলে সবাইকে প্রতিহত করতে হবে। ঘুষের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা। তাই আমরা সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দেয়ালে ও সড়কে বড় করে লিখছি। তারা আরও বলেন, কাজের বিনিময়ে কেউ ঘুষ চাইলে আমাদের জানান। আমরা তাকে প্রতিহত করব এবং তাকে দোহার নবাবগঞ্জ থেকে বহিষ্কার করব।
শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকাণ্ডে খুশি সাধারণ মানুষ। বান্দুরার আউয়াল হোসেন জানান, শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছে। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করা। চাইলেই সহজেই দেশ বদলানো সম্ভব বলে দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শিকারীপাড়ার আসিফ শেখ বলেন, ঘুষ চাইলেই ঘুষি সহ বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক একাধিক লেখা দেখেছি। আসলে তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এই কয়েকদিনে আমরা বিশ্বাস করতে পেরেছি যে শুধুমাত্র ছাত্ররা চেষ্টা করলেই সুন্দর ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে পারে। আশা করি সর্বস্তরের মানুষ তাদের সমর্থন করবেন।