আন্দোলন চলবে, জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে ডিবি হেফাজতে স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে আন্দোলন বন্ধের স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাকি প্রায় সবায় । একই সঙ্গে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। রোববার রাতে টেলিগ্রাম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা এ ঘোষণা দেন।
এক ভিডিও বার্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক সব কর্মসূচি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার রাত নয়টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে রেকর্ড করা এই ভিডিও বার্তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
ভিডিও বার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে লিখিত বক্তব্য পড়তে দেখা যায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমাদের মূল দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার। এরই মধ্যে সরকার তা পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।
নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাত সমন্বয়কারীকে গত তিন দিনে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অন্যরা হলেন- আসিফ মাহমুদ, আবু বকর মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নুসরাত তাবাসসুম (শামসুন নাহার হল শাখা সমন্বয়কারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং আরিফ সোহেল (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমন্বয়কারী)। ভিডিও বার্তায় আরিফ সোহেল ছাড়াও আরও ছয় সমন্বয়কারীকে দেখা গেছে।
গত শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সেখানে চিকিৎসাধীন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদসহ আবু বকরকে সাদা পোশাকের একদল লোক তুলে নিয়ে যায়। পরে ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিরাপত্তার জন্য তিন সমন্বয়কারীকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর গতকাল সরজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে আসে ডিবি। আজ সকালে নুসরাত তাবাসসুম ও আরিফ সোহেলকে আনা হয়।
আজ সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ডিবি হেফাজতে নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ তাদের নিরাপদ মনে করলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বলে রাতে ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বার্তা বেরিয়ে আসে। তাতে লেখা ছিল, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই আমি তাদের ডিবি অফিসে নিয়ে আসি এবং কেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সে বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের কথা শুনে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানালে তাদের দুশ্চিন্তা দূর হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিবি, ডিএমপি টিম বদ্ধপরিকর।
পোস্টের সঙ্গে সংযুক্ত পাঁচটি ছবিতে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদকে হেফাজতে সাত সমন্বয়কারীর সঙ্গে একটি টেবিলে খেতে দেখা গেছে।
তবে ছয়জন সমন্বয়ক ভিডিও বার্তায় অনুষ্ঠান বাতিলের ঘোষণা দিলেও একাধিক সমন্বয়কারী এতে দ্বিমত পোষণ করে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিবৃতি পাঠান।
এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে জানিয়ে সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন। আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এতে বলা হয়, , ‘সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত শত শত শহিদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব।’তিনি বলেন ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের ব্ল্যাকমেইল করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। এই বিবৃতি ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’।
1 Comment