তিন শক্তিশালী অত্যাচারী শাসকের করুণ পরিণতি
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তায়ালা মানুষের ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন, যা সব যুগের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, যার কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনুরূপভাবে আল্লাহতায়ালা স্বয়ং তার উপর কিছু জিনিস হারাম ও নিষেধ করেছেন, যার একটি হচ্ছে কারো উপর জুলুম বা অত্যাচার না করা।
হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার নিজের উপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের প্রতি জুলুম করো না।
(মুসলিম)
এতদসত্ত্বেও যারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করেছে এবং অন্যদের উপর জুলুম করেছে, আল্লাহর শাস্তি তাদের বিন্দুমাত্র রেহাই দেয়নি। ইতিহাসের পাতাগুলি তাদের অত্যাচার ও নির্লজ্জ আচরণের শাস্তি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে তিনটি শক্তিশালী অত্যাচারীর ভয়ানক শাস্তি তুলে ধরা হলো-
নমরোদের অত্যাচার ও তার ভয়াবহ শাস্তি
নমরুদ পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি আল্লাহর সাথে দাম্ভিকতা দেখিয়েছিলেন এবং তার সম্প্রদায়ের প্রতি চরম অত্যাচারী ছিলেন। এই অত্যাচারী আল্লাহকে ধ্বংস করার জন্য আকাশের দিকে একটি টাওয়ার তৈরি করার এবং নিজেকে প্রভু দাবি করার সাহস করেছে।
তার ৪০০ বছরের দীর্ঘ রাজত্বকালে, তিনি পৃথিবীতে চরম অহংকার প্রদর্শন করেছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা শাস্তিস্বরূপ তার নাকে একটি মশা পাঠালেন। এমনকি মশার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে নিজেকে বাঁচাতে হাতুড়ি দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করেন তিনি; কিন্তু তাতেও তাকে বাঁচানো গেল না, বরং শাস্তির মাত্রা বেড়ে গেল বহুগুণ।
আল্লাহ বলেন, আপনি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখেননি, যে ইবরাহীমের সাথে তার রব সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেহেতু আল্লাহ তাকে রাজত্ব(১) দিয়েছিলেন। যখন ইবরাহীম বললেন, “আমার রব তিনিই যিনি জীবনদান করেন ও মৃত্যু ঘটান, সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদয় করান, তুমি সেটাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করাও তো(২)। তারপর যে কুফরী করেছিল সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৫৮)
ফেরাউনের দাম্ভিকতা, অত্যাচার , প্রভুত্বের দাবি আর তার কঠিন চরম শাস্তি
মুসা (আঃ) ও তার সম্প্রদায়ের উপর ফেরাউনের অহংকারী আচরণ ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের কথা কে না জানে!
আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং পবিত্র কোরআনে তার অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে,
اِنَّ فِرۡعَوۡنَ عَلَا فِی الۡاَرۡضِ وَجَعَلَ اَہۡلَہَا شِیَعًا یَّسۡتَضۡعِفُ طَآئِفَۃً مِّنۡہُمۡ یُذَبِّحُ اَبۡنَآءَہُمۡ وَیَسۡتَحۡیٖ نِسَآءَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ
“বস্তুত ফির‘আওন ভূমিতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদেরকে পৃথক-পৃথক দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের একটি শ্রেণীকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রাখছিল, যাদের পুত্রদেরকে সে যবাহ ১ করত ও তাদের নারীদেরকে জীবিত ছেড়ে দিত। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল ফাসাদ বিস্তারকারীদের একজন”।
(সূরা: কাসাস, আয়াত: ৪)
তার উদ্ধত আচরণ এত বেশি ছিল যে তিনি একসময় তার সম্প্রদায়ের কাছে ‘শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক’ দাবি করে বসল। ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ বলেন, ‘আর সে বলল, আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক। পরিণামে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করলেন আখিরাত ও দুনিয়ার শাস্তিতে। যে ভয় করে তার জন্য অবশ্যই এতে রয়েছে শিক্ষা।’ (সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ২৪-২৬)
আল্লাহ তায়ালা তার লোকদের সীমাহীন অত্যাচার এবং প্রভুর দাবির জন্য তাকে এত কঠোর শাস্তি দিয়েছেন যে এটি বিশ্ববাসীর জন্য একটি মহান শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তার শাস্তি কুরআন-ই-মজিদে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে: ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী দেশে অন্যায় অহংকার প্রদর্শন করেছিল। তারা ভেবেছিল তাদের আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। অতঃপর আমরা তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সাগরে নিক্ষেপ করলাম। সুতরাং দেখুন, যালিমদের অত্যাচারীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল! ‘ (সূরা: কাসাস, আয়াত: ৩৯-৪০)
কারুনের অত্যাচার অহংকার ও করুণ পরিণতি
সূরা কাসাসে আল্লাহ তায়ালা কারুনের অত্যাচার এবং এর চূড়ান্ত পরিণতি বর্ণনা করেছেন এভাবে:
নিশ্চয় কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। আর আমরা তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করুন, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, অহংকার করো না, নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরাঃ আল-কাসাস ,আয়াতঃ ৭৬)
সে বললঃ এই সম্পদ আমি আমার জ্ঞান বলে প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানতোনা যে, আল্লাহ তার পূর্বে ধ্বংস করেছেন বহু মানব গোষ্ঠিকে, যারা তার চেয়ে শক্তিতে ছিল প্রবল এবং ছিল অধিক প্রাচুর্যশালী? কিন্তু অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করা হয়না। (সূরাঃ আল-কাসাস ,আয়াতঃ ৭৮)
অতঃপর আমি কারূন ও তার প্রাসাদকে মাটিতে দাবিয়ে দিলাম। তখন তার জন্য এমন কোন দল ছিল না, যে আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে সক্ষম ছিল না। (সূরাঃ আল-কাসাস ,আয়াতঃ ৮১)
সেই আখিরাতের বাসস্থান আমি তাদের জন্য করেছি যারা পৃথিবীর বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্য। (সূরাঃ আল-কাসাস ,আয়াতঃ ৮৩)
এই হলো অত্যাচারীদের জন্য দুনিয়ার কিঞ্চিত সামান্য পরিমাণ শাস্তি। যেগুলোই পৃথিবীবাসী দেখে চমকে উঠেছিল। আর সারা জীবন কেয়ামত পর্যন্ত সকলে মনে রাখবে। আখেরাতের আযাব যখন জালেমদের বিরুদ্ধে দেখবে তখন বুঝতে পারবে জালিমদের আযাব কি রকম হয়? নব্যজালেমদের সেই শাস্তি দেখার অপেক্ষায় আজ বিশ্ব মানবতাসহ বাংলাদেশ।