“বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে” বাংলাদেশের আন্দোলন নিয়ে মমতার মন্তব্য: ক্ষুব্ধ হাসিনা সরকার
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাম্প্রতিক মন্তব্য আলোড়ন সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে ঢাকা দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তার বক্তব্যের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি নোট পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ।
মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির এক্স হ্যান্ডেলে (টুইট) ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে’ মর্মে ‘ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করা হচ্ছে। হাছান মাহমুদ বলেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো, ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক। কিন্তু তার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বক্তব্যে বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে একটি নোট পাঠিয়েছি।”
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংবাদমাধ্যম মমতার মন্তব্য ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার খবর দিয়েছে। ‘অসহায় মানুষ নক করলে বাংলার দরজা খোলা’, বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতার মন্তব্য সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজার্ভেশন ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে নয়াদিল্লিতে, ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর অশান্ত পরিস্থিতি।
তিনি ঢাকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। এদিকে, রবিবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে সংরক্ষণ ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। রবিবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ১লা জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বার্তা দিয়েছেন।তিনি বললেন, ‘এনিয়ে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই, যা বলার ভারত সরকারই বলবে। কিন্তু অসহায় মানুষ বাংলার দরজায় খটখট করলে দরজা খোলা আছে, এটুকু আশ্বাস দিতে পারি।’ ।
অন্যদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশে ভারত অস্বস্তিকর, ‘বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে’, ঢাকার খবর’ শিরোনামে বলা হয়েছে, মমতা ব্যানার্জির কথায় ভারত সরকার বাংলাদেশে অস্বস্তিতে পড়েছে। শেখ হাসিনা সরকার বিনা দ্বিধায় হুট করে বলেছে, মমতা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। মমতা ব্যানার্জির কথায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অসহায় মানুষকে তিনি আশ্রয় দেবেন বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের কাছেও যোগাযোগ করেছে ঢাকা। ‘নোট’ দিয়েছেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা ইতিমধ্যে একটি নোটের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য ভারত সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। মমতার মন্তব্যের জবাবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই ঘোষণা করা হয়নি।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মমতার মন্তব্যে কেন্দ্রীয় সরকার মোটেও খুশি নয়। এটা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই বিষয়ে মন্তব্য করার কোনো এখতিয়ার নেই। সূত্রটি বলেছে, ‘এগুলি এমন বিষয় যা কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনো এখতিয়ার নেই। এই মন্তব্যগুলি (মমতা যা বলেছেন) সম্পূর্ণ ভুল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্যের কারণে মমতার প্রতি কড়া বার্তা ভারত সরকারের:
মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশ সম্পর্কে এই মন্তব্যের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কড়া বার্তা পেয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওয়া আপত্তিকর মন্তব্যের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সংবিধান পড়ে কার্যত মমতাকেও বলা হয়েছে যে অন্য কোনও দেশ বা বিদেশী বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার কোনও রাজ্য সরকারের নেই। সংবিধান রাষ্ট্রকে সেই অধিকার দেয়নি। বিষয়টি একচেটিয়াভাবে ভারত সরকারের হাতে। তাই আন্তর্জাতিক বিষয়ে কোনো রাষ্ট্রের নাক সিঁটানোর দরকার নেই বলে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়।
আরো জানতে
যাতে মুসলিম ভাই ও বোনেরা রমজানে কষ্ট না পায়: মমতা