সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস
‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগানে পাস হওয়া নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩তম । নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করেছে জাতীয় সংসদ। গত ৬ জুন সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
রোববার (৩০ জুন) সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আজ সংসদে মন্ত্রীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি অনুমোদনের দাবি উত্থাপন করেন। এসব অনুমোদনের দাবি সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।
বিরোধী দলের ৬ জন সংসদ সদস্য মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ও বিরোধী দলের সদস্যরা আইন ও বিচার বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে আনা ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। বরখাস্তের প্রস্তাবগুলি পরে কণ্ঠভোটে প্রত্যাখ্যান করা হয়। বরখাস্তের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার, পঙ্কজ নাথ, আবুল কালাম ও নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
এরপর সংসদ সদস্যরা স্পেসিফিকেশন বিল-২০২৪ পাস করেন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।এর আগে গতকাল (২৯ জুন) সংসদে অর্থ বিল-২০২৪ পাস হয় এবং বাজেটের আর্থিক ও কর প্রস্তাব সংক্রান্ত প্রবিধান অনুমোদন করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নন-এনবিআর ১৫ হাজার কোটি টাকা, কর বাদে রশিদ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি দেখানো হয়েছে ২.৫৬ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপির ৫.২শতাংশ।
ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ থেকে সংগ্রহ করা হবে ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ঋণ পরিশোধ খাতে রাখা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খাতে) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। ভৌত অবকাঠামো খাতে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১১ কোটি বা ২৭.১২ শতাংশ; যার মধ্যে সামগ্রিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৯৫ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা; যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। সাধারণ সেবা খাতে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ; সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ; নিট ঋণ ও অন্যান্য ব্যয় খাতে ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ০৮ শতাংশ। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সংসদে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর শনিবার সংসদে অর্থ বিলটি অনুমোদন করা হয়। যা রোববার সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।