November 27, 2024
সঞ্চয়পত্র বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমেই চলছে

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমেই চলছে

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমেই চলছে

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমেই চলছে

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ফলে সরকারকে আরও বেশি ব্যাংক ঋণ নিতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছর ২০২১-২২-এর প্রথম পাঁচ মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে, ৪৪২৭০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ সময় পুরোনো সঞ্চয়পত্রের মূল পরিমাণ ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

এ খাতে সরকারের নিট ঋণ ১০ হাজার ২৫ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ হাজার ১৯ কোটি বা প্রায় ৫৩ শতাংশ কম। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারি অর্থ সংগ্রহ কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ফলে ৩০ ডিসেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২২০,৮৯৬ কোটি টাকা, যা ৩০ জুন ছিল ২,২০০,১১৫ কোটি টাকা।

সুদের হার কমানোসহ নানা শর্তের কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদের হার কমানো হয়েছিল। ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধানও করা হয়েছে। এ কারণে অনেকের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ৩১ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সরকার মোট ৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে। এর মধ্যে মূল পরিমাণ ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। মূল অর্থ প্রদানের পর, অবশিষ্ট পরিমাণ নেট বিক্রয় হিসাবে বিবেচিত হয়। এই হিসাবে, উল্লিখিত সময়ে নিট বিক্রি হয়েছে ৭০১ কোটি টাকা।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি (অনুদান বাদে) ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও এর বিপরীতে সরকার নিয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র কিনতে ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় এক শিক্ষকও অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন।

সম্প্রতি সরকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। বর্তমান বাজেটে, ২ লক্ষ টাকার উপরে ডাক সঞ্চয় ক্রয়ের জন্য ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও, পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র শুধুমাত্র সঞ্চয় অধিদপ্তরে পাওয়া যাবে।

অবশেষে ২১শে সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে লাভের হার কমানো হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দুটি কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে
  • প্রথমত, সঞ্চয়পত্রে অন্যান্য ঋণের তুলনায় সুদের হার বেশি। এ জন্য বেচাকেনা ঠেকাতে সরকার নানা শর্ত আরোপ করেছে।
  • দ্বিতীয়ত, নিত্যপণ্যের দামের লাগামহীন বৃদ্ধি জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এতে খাদ্য, ওষুধ, শিক্ষাসহ জীবনের প্রায় সব খাতে ব্যয় বেড়েছে, যা মানুষের সঞ্চয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “উভয় পক্ষের চাহিদার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে প্রভাব পড়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। সরকার অন্যান্য উত্সকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কম সুদ, অন্যদিকে চাহিদা কমছে, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে সঞ্চয়ের সুযোগ কমে যাচ্ছে। সঞ্চয় করতে না পারলে সঞ্চয়পত্র কিনবে কীভাবে?

সেলিম রায়হান আরও বলেন, “তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের সুদ পরিশোধের চাপ কমছে। সুদের কারণে প্রতি বছর বাজেটে যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়, তাও কম নয়। এই টাকাটা অন্য জায়গায় ব্যবহার করার সুযোগ আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে অনেক নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল, তাদের দিকটা দেখতে হবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা কী করছে? ।

Read more…

সার্বজনীন পেনশন স্কিমঃ সাড়া নেই তেমন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X