সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করলেই মিয়ানমার থেকে গুলি
সেন্ট মার্টিন
সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের সীমান্তের দক্ষিণতম পয়েন্টে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। দর্শনীয় স্থান এবং ভ্রমণের জন্য একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা।এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায়৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর পরিমাণে নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়।
এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে দীর্ঘ। দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা যা উচ্চ জোয়ারে ডুবে যায় এবং ভাটার সময় উঠে যায়। যদি সেগুলি নেওয়া হয় তবে এর ক্ষেত্রফল প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার হবে। দ্বীপের প্রস্থ কখনও ৭০০ মিটার এবং কখনও ২০০মিটার।
সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফগামী দুটি ট্রলার ও কয়েকটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে আবারও গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গত সাত দিন ধরে একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফগামী দুটি ট্রলার ও কয়েকটি স্পিডবোটে মিয়ানমার থেকে ফের গুলি চালানো হয়। ওই নৌকাগুলো টেকনাফ না গিয়ে সেন্টমার্টিনে ফিরে গেছে। গত সাত দিন ধরে মিয়ানমার থেকে এভাবে গুলি চলছে। এ কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সব ধরনের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় চরম সংকটে পড়েছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা।
জানা যায়, এই প্রবাল দ্বীপে ১০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দার বসবাস। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় এখানকার বাসিন্দাদের খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আসে টেকনাফ থেকে। আর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। টেকনাফ-সেন্ট-মার্টিন সমুদ্রপথে প্রতিদিন ট্রলার চলাচল করে। একই সঙ্গে খাদ্যপণ্য পরিবহনে ট্রলারও ব্যবহার করা হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলছে। এর ফলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এদিকে গত ৫ জুন সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার সময় মিয়ানমার থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তা বহনকারী একটি নৌকায় গুলি চালানো হয়। ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হয়নি। এরপর ৮ জুন আবারও কার্গো ট্রলারে গুলি চালানো হয়। কেউ আহত না হলেও ট্রলারটি সাতটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিড বোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে শাহপরী দ্বীপ থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া সম্ভব কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দ্বীপের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনার শেষ প্রান্তে মিয়ানমার থেকে দ্বীপগামী নৌকাগুলোকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। যার কারণে প্রাণের ভয়ে মানুষ পার হতে চায় না। তবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। গত কয়েকদিনে ২-৩টি নৌকায় এভাবে হামলা হয়েছে। পরে মালিকরা নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেন।
সেন্ট মার্টিন স্পিড বোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, নৌকায় খোলা শুটিং দেখে ভয়ে মানুষ এখন আর এ পথে যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই রুট ছাড়া সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার বিকল্প কোনো পথ নেই। সেন্টমার্টিন-টেকনাউফ সমুদ্রপথে প্রতিদিন ৪টি ট্রলার ও ৬টি স্পিড বোট শত শত মানুষের পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য পরিবহন করত।