মাত্র ৩ কোটি টাকার অভাবে গচ্চা গেল ৬০০ কোটি
তিন কোটি টাকার যন্ত্রপাতির অভাবে প্রায় চার মাস বন্ধ রয়েছে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল)। এতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সার উৎপাদিত হয়নি। কারখানার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা না হলেও বন্ধ স্থানীয় জেটি, আবাসিক এলাকা ও মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কারখানার আবাসিক এলাকার উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ পাশের বড় গাছগুলো বিনা অনুমতিতে কাটা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ চোরদের উপদ্রবকে অজুহাত হিসাবে দেখাচ্ছে।
যান্ত্রিক সমস্যার কারণে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে সিইউএফএল।সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, কারখানায় প্রতিদিন এক হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়। প্রতি টন ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় ডিলারদের কাছে। সে অনুযায়ী ইউরিয়া সার থেকে দৈনিক আয় হয় আড়াই কোটি টাকা।
এ ছাড়া কারখানায় প্রতিদিন ৭০০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয়। প্রতি টন ৫৪ হাজার টাকায় মোট ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা অ্যামোনিয়া উৎপাদিত হয়। এ হিসাবে প্রতিদিন সার ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয় ৬ কোটি টাকার বেশি। সে অনুযায়ী ১১২ দিন কারখানা বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত ৬০০ কোটি টাকার সার উৎপাদন করা যায়নি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান আরো জানান, মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। ২৮ টি খুচরা যন্ত্রাংশের চালান ১৫ জুনের মধ্যে এলে কারখানাটি চালু করা যেতে পারে।
এদিকে সিইউএফএল সূত্র জানায়, জরুরি যন্ত্রপাতি উৎপাদনের ব্যবস্থা না করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা স্থানীয় জেটি মেরামতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। জেটি মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিকাদার কাজও শুরু করেছে।
এ ছাড়া সিইউএফএল কেন্দ্রীয় মসজিদ সিসি কাস্টিংয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২৯ লাখ টাকার কার্পেনট্রি ও ২০ লাখ টাকার প্লাম্বিংয়ের কাজ চলছে।
সিইউএফএল এর জেনারেল ম্যানেজার শাহজাহান কবিরের দাবি, ১ কোটি টাকা হলেই কারখানা চালু রাখা যাবে। তিনি আরও বলেন, এ কারখানায় আগে ১ হাজার ৫০০ টন সার উৎপাদিত হতো, এখন উৎপাদিত হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টন। তিনি দাবি করেন, প্রতিদিন ৩ কোটি টাকার সার উৎপাদিত হয়। যাইহোক, প্রতিদিন ৭০০ টন অ্যামোনিয়া উত্পাদিত হয়; যার মধ্যে কিছু CUFL-এ সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বাকি অ্যামোনিয়া ডিএপি সার কারখানায় বিক্রি করা হয়।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান দাবি করেন, আমদানিকৃত সার আনলোড করার জন্য বন্ধ থাকা স্থানীয় জেটিটি মেরামত করা দরকার। তাই মেরামত করা হচ্ছে কোটি টাকা ব্যয়ে। গভীর সাগরে বহির্নোঙ্গরে আমদানিকৃত সার খালাসের বিষয়ে জানালে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মিজানুর রহমান কেন্দ্রীয় মসজিদের সিসি ওয়েল্ডিং এর রি-ওয়েল্ডিং ও কার্পেনট্রি এবং প্লাম্বিং এর ব্যয় সম্পর্কে বলেন, বৃষ্টিতে মুসল্লিদের অসুবিধার জন্য এবং কর্মচারীদের নাগরিক সুবিধা প্রদানের জন্য এসব উন্নয়ন করা হচ্ছে। অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার বিষয়ে তিনি দাবি করেন, কারখানায় চোরের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় গাছ কাটা হচ্ছে।