যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাবির দুই শিক্ষককে অব্যাহতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনায়েদ ও ফলিত গণিত বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক মোহাম্মদ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।
দুটি ঘটনাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে তাই আরও তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুজনকে সব ধরনের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।
মঙ্গলবার (০৭ মে) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।
সিন্ডিকেট সূত্র জানায়, অধ্যাপক নাদির জুনায়েদ ও ফেরদৌসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক নাদির জুনায়েদ ও মোহাম্মদ ফেরদৌসকে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। প্রিভেনশন অব সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলকে আরও তদন্তের জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার সকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক নাদির জুনায়েদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন অধ্যাপক নাদির জুনায়েদকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তবে একদিন পর আজ নাদির জুনায়েদকে সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।
উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনায়েদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন একই বিভাগের এক ছাত্রী। ওই শিক্ষার্থী প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বিভাগের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়ে মানববন্ধন করে।
পরে ১২ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক নাদির জুনায়েদের অফিস ও ক্লাসরুমে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে প্রশাসন অধ্যাপক নাদির জুনায়েদকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়। এছাড়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সাবেক এক ছাত্রী অধ্যাপক নাদির জুনায়েদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে তিনি ঢাবি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অধ্যাপক নাদির জুনায়েদ এবং মোহাম্মদ ফেরদৌসকে BRUA তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলকে তদন্তের জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক নাদির জুনায়েদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন ওই বিভাগের এক ছাত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাস বর্জনসহ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাকে ৩ মাসের ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত মাসের শেষ সপ্তাহে নাদির জুনায়েদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রী। এমন পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট সভায় অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।এগুলো মঙ্গলবার সিন্ডিকেট সভায় কমিটির প্রতিবেদন পেশ করা হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, সম্প্রতি রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় ‘যৌন সম্পর্ক’ স্থাপনের প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। পরে তিনি বিভাগের চেয়ারপারসনের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়। চেয়ারপারসন বলেন, একাডেমিক কমিটির বৈঠকে ওই শিক্ষক অপরাধের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
অন্যদিকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ফেরদৌস জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতেন। ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেন ওই বিভাগের এক ছাত্রী। পরে উপাচার্যের কাছে অভিযোগ পাঠায় অধিদপ্তর।
অভিযোগটি তদন্ত করতে গত ৩১ মার্চ আইন অনুষদের ডিন ড. সীমা জামানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়
যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক নাদির জুনায়েদ বলেন, বিশেষ উদ্দেশ্যে টার্গেট করে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। আমাকে বিভাগের চেয়ারম্যান পদে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হতে পারে- এ বিষয়ে খবর পেয়ে শাহবাগ থানায় জিডিও করি। তবে অভিযোগ দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে গণমাধ্যমে খবর আসছে তাতে আমি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছি। এভাবে অনর্থক সামাজিকভাবে বিশ্রী হওয়া আমার কাম্য নয় । এক-দুই বছর পর হয়তো এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে, তাহলে তখন আমার এই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে কে ? ।
আরও পড়ুন
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা: চবি শিক্ষক মতিনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত