সকালে নতুন মোটরসাইকেল কিনে বিকেলে দুর্ঘটনায় এক যুবক নিহত
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় মোটরসাইকেল ও গরু বোঝাই পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নাহিদ হাসান (২৩) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের বড়চালা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত নাহিদ হাসান কালিয়াকৈর উপজেলার জাথালিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার মইজ উদ্দিনের ছেলে। স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আজ সকালে ওই যুবক একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন। বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ার পর দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত নাহিদের স্বজনরা জানান, আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে ফুলবাড়িয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের বড়চালা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা গরু বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী নাহিদ হাসান নিহত হয়। খবর পেয়ে ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নাহিদের মরদেহ উদ্ধার করে।
ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল মোল্লা বলেন, নাহিদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বজনদের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি তার স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পারেন, নাহিদ সকালে একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন। বিকেলে ওই মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি ফুলবাড়িয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর চালক পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, সারাদেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছেই। বিগত বছরের প্রতিটিই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙেছে। এ বছরও তা কমছেনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সব দুর্ঘটনার মৃত্যুর অর্ধেক বা তার বেশি হয়। এর প্রধান কারণ মোটরসাইকেলের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনাও। কিছু দুর্ঘটনা এতটাই মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়কভাবে ঘটে যে মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। প্রতিটি দুর্ঘটনায় প্রতিটি পরিবারের স্বপ্ন মুছে যায় অঙ্কুরেই। কিন্তু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অদক্ষ চালক, অসতর্কতা, লাইসেন্স না থাকা, প্রশিক্ষণ ছাড়া গাড়ি চালানো, আইন অমান্য করা, বেপরোয়া গতিসহ নানা কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক সময় অন্য যানবাহনের কারণেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা বলছে, দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সংস্থাটির দাবি, গত পাঁচ বছরে (২০২৩ সাল পর্যন্ত) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ১৬ শতাংশ বেড়েছে। আর এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। সারা দেশে ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৩টি মোটরসাইকেল মৃত্যুদূতের মতো। অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে এসব মোটরসাইকেল প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।
নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় তারা সহজেই মোটরসাইকেল চালাতে পারেন। ট্রাফিক মামলা এড়াতে অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের ঘুষ দিয়ে সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। চালকরা নিয়ম ও নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। তারা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালেও নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার করেন না। যারা করেন তারা স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট ব্যবহার করেন না। হেলমেটের অভাবে দুর্ঘটনার পর অনেকেই মারা যাচ্ছে। তবে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করলে মৃত্যু অনেকটাই কমানো যেত।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যেসব দেশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে তারা হয় তাদের দেশে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করেছে। বা চলাচল সীমিত রেখেছে । তাই দুর্ঘটনা কমাতে যেসব দেশ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা কমাতে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা চলাচলে সীমাবদ্ধতা বা নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন এমন কিছু আমি দেখছি না।” তবে এ বিষয়ে আমরা সময়ে সময়ে দাবি জানিয়ে আসছি। দাবিগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা আমাদের উদ্দেশ্য। সরকারের কানেও পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সরকার দুর্ঘটনা কমানোর অঙ্গীকার করেছে কিন্তু কিছুই হচ্ছেনা । এটি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ফোরামেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সুশাসন নিশ্চিত করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। ভারতীয় যানবাহন আমাদের মতো বেপরোয়া নয়। কারণ তাদের গাড়ির গতিসীমা রয়েছে। সবাই এই গতিসীমার মধ্যে চলে। তারা লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে। সারা বিশ্বে যেভাবে আইন প্রয়োগ করা হয় আমরা আমাদের দেশে তা করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন , হয়তোবা ডিজিটাল ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।