গরমের তীব্রতায় বেড়েছে কলেরা রোগীঃ হিট স্ট্রোকে এক সপ্তাহে ১০ জনের মৃত্যু
সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, আর হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন এ সপ্তাহেই ১০ জন । যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তাদের কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে, এ তথ্য আইসিডিডিআর,বি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিজস্ব জরিপ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) বা মহাখালীর কলেরা হাসপাতাল, ডায়রিয়া রোগের অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র বলেছে, ১৬ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসা নেওয়া ডায়রিয়া রোগীর ৪ শতাংশ পাওয়া গেছে। কলেরার জীবাণু আছে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির পর ৮ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়ার জন্য চিকিত্সা করা রোগীদের ৬ শতাংশ তাদের শরীরে কলেরার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, ২৯টি দেশ এখনও কলেরার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে; এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব দেশে কলেরা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
আইসিডিডিআর,বি সূত্র জানায়, চলমান তাপপ্রবাহে তাদের হাসপাতালে দৈনিক গড়ে পাঁচ শতাধিক কলেরা রোগী ভর্তি হচ্ছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রোগী বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে গত ২২ এপ্রিল ৫৫০ জন, ২৩ এপ্রিল ৫২৮ জন, ২৪ এপ্রিল ৫১৮ জন, ২৫ এপ্রিল ৫৬৮ জন, ২৬ এপ্রিল ৫১২ জন, ২৭ এপ্রিল ৫২৯ জন এবং ২৮ এপ্রিল রোববার ৪৯৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
সোমবার সরেজমিনে কলেরা হাসপাতালে দেখা যায়, বাইরে আত্মীয়-স্বজনের ভিড়। জরুরী বিভাগে উপস্থিত রোগীদের প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরা হয়। এরপর পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়, রোগী আসলে কী ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। পরে অবস্থার উপর নির্ভর করে স্যালাইন দেওয়া বা ভর্তি করা হয়। কিছু রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে দেখা গেছে।
আইসিডিডিআর-এর সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, “ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার ফলে এই রোগ হয়। এবং মারাত্মক ডায়রিয়াকে কলেরা বলা হয়। আইসিডিডিআর,বি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে। কলেরা। গরম আবহাওয়ায় এই রোগীদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বেশি দেখা যায়।
কলেরা হাসপাতালের প্রধান ডাঃ বাহারুল আলম বলেন, বিশেষ করে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তাদের অনেকের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শরীরে আরও কলেরার জীবাণু পাওয়া যাবে। শীতকালে দেখা যায় বিপরীত অবস্থা। শীতকালে ডায়রিয়ার রোগীদের রোটাভাইরাস বেড়ে যায়। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে, ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে কলেরা ভাইরাসও বেশি ছিল। সেই বছরের এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ছিল কলেরা রোগী।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক হোসেন বলেন, কলেরা ভাইরাস মূলত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। কলেরায় আক্রান্ত ব্যক্তি খুব দ্রুত পানি হারায়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে কলেরা মারাত্মক হতে পারে। এর জীবাণু সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার বা দূষিত পানি থেকে আসে। গরমে পানি কমে যাওয়ায় রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
হিট স্ট্রোকে এক সপ্তাহে ১০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য দফতর
মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে সারাদেশে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন পাঁচজন। সারা দেশে হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ২২ এপ্রিল থেকে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। সংস্থাটি আজ জানিয়েছে, মাদারীপুর জেলায় হিট স্ট্রোকে নতুন তিনজনের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। . চট্টগ্রাম জেলায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মৃত্যু হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার হিট স্ট্রোকে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও পাঁচজন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গরমজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। ২২ এপ্রিল, অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই নির্দেশিকাগুলি ব্যবহারে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেন। ‘অন ম্যানেজমেন্ট অফ হিট রিলেটেড ইলনেস’ এই নির্দেশিকাটির ভিত্তিতে সারা দেশে চিকিৎসকদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।