ভোটার ছাড়া ভোট, চুন ছাড়া পান খাওয়ার মতো: ইসি রাশেদা
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট দেওয়া, চুন ছাড়া পান খাওয়ার মতো। এ সময় তিনি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাশেদা সুলতানা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সব প্রার্থীর সঙ্গে সমান আচরণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে নির্বাচনকে বাংলাদেশের মানুষ উৎসব মনে করে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার। আলমগীর। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার উপস্থিতির নিরিখে আপনারা দেখেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এই তীব্র গরমেও কোনো কোনো কেন্দ্রে ৭০%, কোনো কেন্দ্রে ৮০% ও ৬০% ভোটার উপস্থিতি ছিল। কারণ জনগণের মধ্যে নিশ্চয়ই একটা আস্থা আছে যে তারা এখন ভোট দিতে পারবে, আমি ভোট দিতে পারব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভালো পরিবেশ পেলে ভোটকে উৎসব মনে করে। সেই উৎসবের অংশ হিসেবে আমরা মনে করি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ভালো হবে। হ্যাঁ তবে গরমের কারণে মানুষ একটু কষ্ট পাবে। মানুষ এখনো ভোট দিতে আসবে।
আলমগীর বলেন, কোনো মন্ত্রী, এমপি বা সরকারের বিভিন্ন পদে থাকা কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কোনো আত্মীয় প্রার্থী হলে তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারেন বা পক্ষ নিতে পারেন। তাদেরকে কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে যে তারা এটা করতে পারবে না। এরপরও যদি তারা তা করে তাহলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। একইভাবে ওই মাননীয় মন্ত্রী, এমপি বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান, পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ (পিপিএম)সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে বাংলাদেশে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ভারতীয় বিশ্লেষকের বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে।
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শ্রীরাধা দত্ত বলেন, বাংলাদেশ সরকার বলছে ৪০ শতাংশ ভোটার, যেখানে আন্তর্জাতিক সূত্র ও সাংবাদিকরা বলছেন ২৭ শতাংশ। কিন্তু আমরা জানি আওয়ামী লীগপন্থী অনেকেই বলেছেন ভোট ২০ শতাংশের নিচে। নির্বাচনের দিন হরতালের মতো রাস্তা ফাঁকা দেখেছি। তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলছেন, গ্রামের চেয়ে শহরে ভোট বেশি। আমার পরিচিত কয়েকজন ভোট দিয়েছেন, তারা বলছেন ১০ শতাংশের বেশি নয়।
ঢাকার একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার বক্তব্য ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন, চীনের ব্যবস্থা ভারতের সঙ্গে মেলে না। তবে ভারত চীনের সঙ্গে কাজ করেছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে সরকার ভারতের স্বার্থ দেখবে।
তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা আমাদের নিরাপত্তার জায়গা দেখেছেন। সে ক্ষেত্রে ভারত সরকার জোরালো সমর্থন পাচ্ছে, ভারত গণতন্ত্রের বিষয়টিকে সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে না। আমরা যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বা অনুশীলন করি, তাদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা থাকতে পারে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গণতন্ত্র’ আর ভারতের কেন্দ্রবিন্দু নয়।
আমি দুই বছর আগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভঙ্গুর। আর এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আমি এখানে যা দেখছি তা একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ব্যাখ্যায় বলেন, “ঢাকার পাঁচ-দশটি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের চিত্র বোঝা যাবে না। শহর ও গ্রামাঞ্চলে ভোটের ধরন আলাদা। আর গত (রবিবার) যখন বললাম, ৪০ ড্যাশবোর্ডে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, যা থেকে ৪০ শতাংশ ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, কারো সন্দেহ থাকলে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, আর যদি মনে করেন তারা বাড়াবাড়ি করেছে, তাহলে আপনাকে মোস্ট ওয়েলকাম, আমাদের অসততা কে চ্যালেঞ্জ করবে?, যদি মনে করেন, তাহলে যাচাই করা যাবে। ”
নির্বাচন কমিশনের ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ২২৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১টি আসনে। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ, আইএনইউ) নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি আসনে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৬১টি আসনে জয়ী হয়েছে।
সিইসি বলেন, মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৫ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ জন, এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৫ জন। এর শতাংশ ৪১.৮ শতাংশ।