November 25, 2024
যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (২য় পর্ব)

যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (২য় পর্ব)

যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (২য় পর্ব)

যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (২য় পর্ব)

অভিশাপ সম্পন্ন পাপ যেগুলো করলে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে রসুলের (স.) পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে এবং  সমগ্র মানবজাতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পাপকারীর উপর অভিশাপ নেমে আসে । এগুলো নিয়ে পূর্বের পর্বে  আলোচনা করেছিলাম।  সে আলোচনার ধারাবাহিকতায় আরো কতিপয় অভিশাপ মূলক পাপের উল্লেখ করা হলো।

আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যাচার:

আল্লাহ তাঁর সম্পর্কে মিথ্যাচার কারীকে অভিশাপ দেন।

আল্লাহ বলেন ,আর ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে?[1] ঐ লোকদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে পেশ করা হবে এবং সাক্ষী (ফিরিশতা)গণ বলবে, ‘এরা ঐ লোক যারা নিজেদের প্রতিপালক সম্বন্ধে মিথ্যা বলেছিল। জেনে রেখো, এমন অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ।(সূরা: হুদ, আয়াত: ১৮)

অস্ত্র দিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো:

যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষকে ভয় দেখায় তাকে ফেরেশতারা অভিশাপ দেন। ইবনু সিরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে (লোহার তৈরি) অস্ত্র উঠায় ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। , যদিও সে ভাই ছিল।’ (মুসলিম)

তাকদির বা ভাগ্যকে অস্বীকার:

যারা ভাগ্যকে অস্বীকার করে তারা অভিশপ্ত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,‘ছয় ব্যক্তিকে আমি লানত করি, আল্লাহ তাআলা লানত করেন এবং প্রত্যেক নবী লানত করেছেন। (তারা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাবে সংযোজনকারী, তাকদির মিথ্যা প্রতিপন্নকারী, শক্তি দ্বারা ক্ষমতা দখলকারী, যে ক্ষমতার বলে সে আল্লাহ তাআলা যাকে অপদস্থ করেছেন তাকে সম্মানিত করে এবং আল্লাহ যাকে সম্মানিত করেছেন তাকে অপদস্থ করে, আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু হালাল জ্ঞানকারী, আমার পরিবার-পরিজনদের মধ্যে যাদের আল্লাহ হারাম করেছেন তাদের হালাল জ্ঞানকারী ও আমার সুন্নাত পরিত্যাগকারী।’ (তিরমিজি)

জমির দিক বা নিশানা পরিবর্তন করা :

আবূ তুফায়ল আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তার নিকট এসে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন? রাবী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল- হে আমীরুল মুমিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেনঃ ১. যে লোক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যাবাহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোন বিদ’আতী লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন।(মুসলিম)

খুন :

হত্যা, রক্তপাত এবং খুনইসলামে জঘন্য অপরাধ। এ কাজ আল্লাহ মোটেই পছন্দ করেন না। তাই তিনি খুনি ও খুনিদের অভিশপ্ত বলেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন বিশ্বাসীকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন,  তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (সূরা নিসা: ৯৩)

মিথ্যা বলা:

মিথ্যা বলা খুবই খারাপ জিনিস। আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের অভিসম্পাত করেছেন।

তিনি বললেন, তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি তোমার সাথে (ঈসার সম্বন্ধে) বিতর্ক করবে তাকে বল, ‘আসো, আমাদের পুত্রদেরকে এবং তোমাদের পুত্রদেরকে আর আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে আহবান করি, অতঃপর আমরা মুবাহলা করি আর মিথ্যুকদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি। (সূরা আলে ইমরান : ৬১)

মুনাফিকি:

মুনাফিক শব্দের অর্থ প্রতারক। ইসলামের পরিভাষায় মুখে ঈমানের কথা বলতে গিয়ে অন্তরে কুফর চাষ করার নামই মুনাফেক। আল্লাহ মুনাফিকদের অভিশাপ দিয়েছেন।

তিনি বললেন,আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি (সূরা তওবা : ৬৮)

বিশ্বাসঘাতকতা:

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং বিশ্বাসঘাতকতা করা ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বিশেষ করে যখন কেউ আল্লাহর কাছে দেয়া  প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, আল্লাহ তাদের অভিশাপ দেন।

আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদেরকে অভিসম্পাত করেছি ও তাদের হৃদয় কঠোর করে দিয়েছি, তারা (তাওরাতের) বাক্যাবলীর পরিবর্তন সাধন করে থাকে[1] এবং তারা যা উপদিষ্ট হয়েছিল তার একাংশ ভুলে গেছে।[2] তুমি সর্বদা ওদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত[3] সকলেরই তরফ হতে বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদ পেতে থাকবে।[4] সুতরাং তুমি ওদেরকে ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর।[5] নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।’ (সূরা মায়িদাহ: ১৩)

এই আয়াতে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অর্থ হলো, মানুষের আত্মা সৃষ্টির পর আল্লাহ ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, তারা পৃথিবীতে এসে তাঁর প্রতি ইমান আনবে। সকল মানুষ এক বাক্যে তা মেনে নিয়েছিল। (সুরা আরাফ: ১৭২))

আল্লাহ আমাদেরকে উপরোক্ত উপরে উল্লেখিত অভিসম্পাত সম্পন্ন, অভিসম্পাত মূলক পাপগুলোকে ছেড়ে নিজের জীবন পরিশুদ্ধ করার তৌফিক দান করুন আমীন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X