November 25, 2024
রণক্ষেত্র মধুখালী, মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের গুলি, সংঘর্ষঃ ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি গঠন

রণক্ষেত্র মধুখালী, মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের গুলি, সংঘর্ষঃ ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি গঠন

রণক্ষেত্র মধুখালী, মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের গুলি, সংঘর্ষঃ ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি গঠন

রণক্ষেত্র মধুখালী, মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের গুলি, সংঘর্ষঃ ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি গঠন

ফরিদপুর জেলার মধুখালীতে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও দুই শ্রমিক হত্যার ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে পাঁচ সদস্যের ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে বিএনপি। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ঘটনা তদন্ত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করেছে তদন্ত কমিটি। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু।

মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ কমিটি গঠন করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বৈঠকে ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত মধুখালীতে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং নিকটবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেট নির্মাণের কাজ করার সময় দুই শ্রমিককে নির্মমভাবে মারধরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও দুই শ্রমিক সহোদরকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দলটির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

উল্লেখ, ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় ২ জন নিহত হয়েছেন

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় একটি মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও মারধরে পার্শ্ববর্তী একটি বিদ্যালয়ের দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

ফরিদপুরের ডিসি কামরুল হাসান তালুকদার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে ডুমাইন ইউনিয়নের পাঁচপল্লী এলাকায় এ ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “পঞ্চপল্লী মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় জনতা তখন পাশের পঞ্চপল্লী স্কুলে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়।”

দুপুর সোয়া ২টার পর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ডিসি কামরুল সাংবাদিকদের জানান, দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, “একজন (হাসপাতালে) ঘটনাস্থলেই মারা যান। আরেকজন মাত্র মারা গেছেন।

“আরো দুজন গুরুতর আহত। আমরা তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রয়োজন হলে ঢাকায় রেফার করব। আর তিনজন মধুখালী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।”

হতাহতদের পরিচয় জানতে চাইলে ডিসি বলেন, আমরা যতদূর জানি তারা সবাই ফরিদপুর মধুখালীর বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যরা আসছেন, তারপর নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা পঞ্চপল্লীর কালী মন্দিরে আগুন লাগে। সেই মন্দিরের পাশেই পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে টয়লেট তৈরির কাজ করছিলেন নির্মাণ শ্রমিকরা।

তখন বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

মধুখালী রণক্ষেত্র, মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের গুলি, সংঘর্ষ:

ফরিদপুরে দুই শ্রমিকের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করায় মধুখালী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে ঘোপঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে পুলিশ ও স্থানীয় জনতার মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টার সংঘর্ষে প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার মধুখালী উপজেলা ঈদগা মাঠের পাশে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পাঁচপল্লী এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মধুখালী থেকে ঘোপঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার যাওয়ার পর পুলিশ বাধা দেয়। এসময় পুলিশের সাথে স্থানীয় জনতার সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং একজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় খবর রটে আহতদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। এমন খবরে বিক্ষুব্ধ জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে উপজেলার মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, নওপাড়া ইউনিয়নের নওপাড়া ইউইন মোড়, বাগাট ইউনিয়নের আরকান্দি ব্রিজ, ঘোপঘাট, আড়পাড়া ইউনিয়ন ও কামারখালী ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এর মধ্যে নওপাড়া, ঘোপঘাট, মালেকা চক্ষু হাসপাতাল ও মধুখালী বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

বিক্ষোভকারীরা গাছের গুঁড়ি ও বাঁশ দিয়ে কয়েকটি স্থানে আগুন দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা দূরে অবস্থান করে আবার মহাসড়ক অবরোধ করে।

তিন ঘণ্টার অবরোধে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পুলিশ সুপার, র‌্যাব ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সহায়তায় কিছুক্ষণ যানবাহন চলাচল শুরু করলেও মধুখালী বাজার এলাকায় আবারও সড়কে পাউডার ছুড়ে ও টায়ারে আগুন দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশ ও বিভিন্ন যানবাহনকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে পরিবহনগুলো বিকল্প রুটে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিকেলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যান চলাচল শুরু হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকজন নারী বলেন, বিচারের দাবিতে আমরা আজ পাঁচ দিন মহাসড়কে দাঁড়িয়ে আছি। যখন মায়ের কোল খালি থাকে তখন সেই মা জানে সন্তান হারানোর বেদনা। আমরা এই হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, নির্মাণ শ্রমিকরা পঞ্চপল্লীতে কাজ করতে গিয়েছিল, এমন গুজব ছড়িয়ে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আমরা রাজপথে নেমেছি। পুলিশ আমাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। তারা এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে ধরতে পারেনি। এ মামলায় ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরব না।

এদিকে মানববন্ধনের ডাক দেননি কোনো নেতা বা দায়িত্বশীল ব্যক্তি। শুধুমাত্র কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ব্যানার পোস্টার লিফলেট ছাড়াই বিচ্ছিন্নভাবে শত শত মানুষ এতে অংশ নেন।

মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বাকু বলেন, এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমদাদ হোসেন জানান, বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে। তবে পুলিশের ১০ থেকে ১৫ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কোনো মামলা আছে কিনা তা পরে বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, যারাই দোষী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করতে পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এ ধরনের আন্দোলন পুলিশের কাজে ব্যাঘাত ঘটাবে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পাঁচপল্লী এলাকার বারোয়ারি মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পার্শ্ববর্তী পাঁচপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের নির্মাণ শ্রমিকরা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের মধ্যে দুই ভাই ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা মাঠে কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X