কলেজছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে আওয়ামী লীগ নেতা বড় মনির
টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ (ধর্ষণসহ সকল অপকর্মে শ্রেষ্ঠ) নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে আরেকটি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এবার ঢাকায় এক কলেজ ছাত্রীকে বন্দুকের মুখে ধর্ষণ করে সে । শুক্রবার রাতে ঢাকার তুরাগ এলাকার প্রিয়াঙ্কা সিটি আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’-এ কল পেয়ে পুলিশ ওই এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠায়। তবে বড় মনিরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে তুরাগ থানায় মামলা করেছেন। বড় মনির টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুনাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই। তিনি টাঙ্গাইল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
তুরাগ থানায় দায়ের করা অভিযোগে নির্যাতিতা অভিযোগ করেন, তার স্বামী দুবাইয়ের বাসিন্দা। সে কারণে বাবার সঙ্গে দক্ষিণখান এলাকায় থাকেন।
দুই মাস আগে ফেসবুকে বড় মনিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বড় মনির পরিচিত বলে ডাকতেন ‘ছোট বোন’। এরপর থেকে বড় মনির তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। একপর্যায়ে বড় মনির তাকে জানান, তার বাড়ি টাঙ্গাইলে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উত্তরা হাউস বিল্ডিং মাসকট প্লাজার পেছনে বড় মনির তাকে ডেকে নেন। বললেন, অপু, ঢাকায় এসেছি? তুমি কি আমার সাথে কিছুক্ষণ দেখা করতে পারবে? সকালে টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে রওনা দেব। পরে ভিকটিম মাসকট প্লাজার পেছনে এসে বড় মনিরের সঙ্গে দেখা করে। এরপর বড় মনির ভিকটিমকে তার গাড়িতে তুলে নেন। কথাবার্তা শেষে বড় মনির তাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরদিন বুধবার বিকেলে বড় মনির ভিকটিমকে উত্তরা জমজম টাওয়ারের সামনে থাকতে বলেন। সে অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জমজম টাওয়ারের সামনে আসেন নির্যাতিতা। ঠিক ১০-১৫ মিনিট পর বড় মনির একটি রিকশায় এসে ভিকটিমকে তুরাগ থানা এলাকার প্রিয়াঙ্কা সিটি নামের একটি ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা আনোয়ার বলেন, টাঙ্গাইলের বড় মনিরের বিরুদ্ধে ভিকটিম বাদী হয়ে ধর্ষণের মামলা করেছেন। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। ভিকটিমকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতার বাবা বলেন, “ফেসবুকের মাধ্যমে আমার মেয়ে মনিরের সাথে পরিচয় হয়। আমার মেয়েকে দেখা করার জন্য ফ্ল্যাটে নিয়ে বন্দুকের মুখে ধর্ষণ করা হয়। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
এর আগে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর আরেক কিশোরীকে ধর্ষণ করেন বড় মনির। এ ঘটনায় গত বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন মেয়েটি। ওই মামলায় গত বছর গ্রেপ্তার হয়ে এখন জামিনে রয়েছেন তিনি। ওই মামলায় বড় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়। টাঙ্গাইলের ওই ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সম্পত্তি নিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দিলে সে বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানায়। কিবরিয়া সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য তাকে ১৭ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে শহরের কোর্ট ডিস্ট্রিক্টে একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পর বড় মনিরের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। ঘটনা জানাজানি হলে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। ওইদিন ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে বড় মনি তাকে আরও কয়েকবার ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ফলে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে বিষয়টি জানালে সে তাকে চাপা দিয়ে ও গর্ভের সন্তান নষ্ট করার হুমকি দেয়। গত বছরের ২৯ মার্চ বড় মনির ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে আবারও ধর্ষণ করে। সেখানে তার স্ত্রী নিগার আফতাবও ওই তরুণীকে মারধর করেন। পরে মেয়েটির একটি সন্তান হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল মহসিনের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন বড় মনির। বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে জামিনের জন্য হাইকোর্টে যান বড় মনির। এরপর বড় মনির ও নবজাতক শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে বলেন আদালত।
গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগে জমা দেওয়া ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার ওই নবজাতকের বাবা বড় মনির নন। যদিও পিবিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবজাতকের ডিএনএ বড় মনিরের ডিএনএর সঙ্গে মেলেনি। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট অনুকূলে আসার সুবাদে গত বছরের ৯ অক্টোবর বড় মনিরকে জামিন দেন আপিল বিভাগ। অন্যদিকে, গত বছরের ১৮ নভেম্বর ধর্ষণ মামলার আসামি তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।