November 23, 2024
পরিবহন খাত ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত: টিআইবি

পরিবহন খাত ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত: টিআইবি

পরিবহন খাত ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত: টিআইবি

পরিবহন খাত ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত: টিআইবি

শুধু পরিবহন খাত কেন দেশের সকল খাতকে দীর্ঘ সময় একটি সরকারের পরিচালনার কারণে এবং সকল ক্ষেত্রেই রাজনীতিকরণ করার ফলে শুধু দুর্নীতিই  নয় ধ্বংসের প্রান্তে  নিয়ে গেছে । এবং সুযোগ সন্ধানীরা  আরো বেশি দুর্নীতির সুযোগ নিয়েছে। তারই সামান্য প্রতিফলন টিআইবি’র এই রিপোর্ট।

পরিবহন খাতে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বাস মালিক সংগঠনের ৯২ শতাংশ মালিক সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই সরকারি দলের। এসব সংগঠনের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তার যোগসাজশ রয়েছে। এ কারণে পুরো পরিবহন খাত দুর্নীতিতে জর্জরিত।

গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় সততা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো খাত নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের উদ্দেশ্য এতটাই স্পষ্ট যে, মালিক সমিতির চাপের কাছে সরকার প্রায়শই শক্তিহীন। এই শ্রমিক-মালিক সংগঠনগুলো সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আইন বা নীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ তারা অনেক ক্ষেত্রে সরকারের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান। যে কারণে আমরা এ খাতে প্রত্যাশিত মান অনুযায়ী সেবা পাচ্ছি না।

এর আগে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মুহা. নুরুজ্জামান ফরহাদ, ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলম। গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, সড়কে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলকারী প্রতিটি বাসের জন্য নিবন্ধন ও ৩ ধরনের সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক হলেও ৪০.৯ শতাংশ বাস শ্রমিক-শ্রমিকের মতে, একটি বা একাধিক সনদপত্রের ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আরো বাস।

সংগঠনটির দাবি, ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাসের নিবন্ধন নেই, ২৪ শতাংশ বাসের ফিটনেস নেই, ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ বাসের ট্যাক্স টোকেন নেই এবং ২২ শতাংশ বাসের রুট পারমিট নেই।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস শ্রমিক বা শ্রমিকদের মতে, মতে ৪২.৫ শতাংশ কোম্পানির সিটি সার্ভিস বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়, আন্তঃজেলায় হয় ২৪.৪ শতাংশ কোম্পানির বাসে। নারী বাসযাত্রীদের ৩৫.২ শতাংশ যাত্রাপথে কোনো না কোনো সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হতে দেখেছেন। এই হার আন্তঃজেলা বাসের ক্ষেত্রে নারী বাস যাত্রীদের ৩৫.২ শতাংশ যাত্রাপথে কোনো না কোনো সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হতে দেখেছেন। এই হার আন্তঃজেলা বাসের ক্ষেত্রে ১.৩ শতাংশ এবং সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ৪২.৬ শতাংশ। এসব ঘটনায় যাত্রীরা ৮৩.২ শতাংশ সহযাত্রী ও ৬৪.৩ শতাংশ হেলপারকে দায়ী করছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে বিভিন্ন সার্টিফিকেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বিলম্বের পাশাপাশি নানা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছে বাস মালিক ও চালকদের। মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রতি বাসে গড়ে ১২ হাজার ২৭২ টাকা, ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যুতে ৭ হাজার ৬৩৫ টাকা এবং রুট পারমিট ইস্যুতে ৫ হাজার ৯৯৯ টাকা দিতে হয়। ঘুষ দেওয়া বাসের হার যথাক্রমে ৪১.৯, ৪৬.৩ ও ৪২.৬ শতাংশ। এ ছাড়া ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে আন্তঃজেলা-দূরপাল্লার বাসের জন্য প্রতিমাসে ১ হাজার ১৯ টাকা, আন্তঃজেলা-আঞ্চলিক বাসের জন্য মাসে ১ হাজার ১৩৩ টাকা এবং প্রতিমাসে ৫ হাজার ৬৫৬ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি মালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় বিভিন্ন গ্রুপ, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়। সড়কে চাঁদাবাজি, পার্কিং, মামলা এড়ানো, বিআরটিএ থেকে নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সনদের জন্য এই টাকা আদায় করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৯০০ কোটি টাকা অনিয়মিতভাবে আদায় করে বিআরটিএ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস শ্রমিকদের দৈনিক প্রায় ১১ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। যাদের মধ্যে ৮২ শতাংশের কোনো নিয়োগপত্র নেই, ৬৯.৩  শতাংশের নেই নির্ধারিত মজুরি। যাত্রীসেবা প্রসঙ্গে সংস্থাটি দাবি করেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৫.৮ শতাংশ  যাত্রী, ৪৮ শতাংশ শ্রমিক এবং ৫১.৮ শতাংশ মালিক বাসের মাত্রাতিরিক্ত গতিকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২২.২ শতাংশ কর্মী/শ্রমিকদের মতে, মদ্যপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক গাড়ি চালান এবং কন্ডাক্টর/হেলপার/সুপারভাইজার বাসে দায়িত্ব পালন করেন- সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে এ হার ৪৫.৯ শতাংশ এবং আন্তঃজেলার ক্ষেত্রে ১৯.২ শতাংশ বলে জানায় সংস্থাটি।

সংস্থাটি আরও বলেছে, নির্দেশিকা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের অভাবে চালকরা চলন্ত বাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, যার ফলে প্রাণহানিসহ অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিআরটিএ প্রকাশিত তথ্য এবং বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।

 আরও পড়ুন

দুদক কর্মকর্তা যখন নিজেই দুর্নীতিবাজ

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X