সংঘাত আর মৃত্যুতে শেষ হলো নির্বাচনী প্রচারঃ ৭ জানুয়ারি ভোট
আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা মাত্র দুই দিনের। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেন। আর শেষ দিন বৃহস্পতিবার সারাদেশে প্রচারণা চালান প্রার্থীরা। এদিন বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। নির্বাচনী সংঘর্ষে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে বুধবার গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পে গুলিতে ডালিম সরকার নামে নৌকা প্রার্থীর এক কর্মী নিহত হয়েছেন। একই দিন বিকেলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিলের পর গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টার পর কোনো ধরনের জমায়েত, মিছিল ও প্রচারণার অনুমতি দেবে না ইসি।
নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হওয়ার একদিন পর রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এক প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ। এর মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ। আর হিজড়া ভোটার রয়েছে ৮৪৯ জন।
নিজেদের মধ্যেই সংঘাত-সহিংসতা, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য দলগুলোর প্রচার-প্রচারণা তেমন একটা দেখা যায়নি। ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ৪ জানুয়ারি
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ২৩ ডিসেম্বর মাদারীপুরের কালকিনিতে। ওই দিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ দিনে নির্বাচনী সংঘর্ষ ও সহিংসতার মোট ১৫৬টি ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে হুমকি-ধামকিসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী ঢাকার প্রায় ১৫টি আসনের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাথ ও সড়কে নির্বাচনী ক্যাম্প (অফিস) স্থাপন করে জনগণের চলাচলে বাধা দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও নিয়ম অমান্য করে রঙিন পোস্টার-ব্যানার টাঙাতে দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় বিধি লঙ্ঘনের এসব ঘটনা বেশি দেখা গেছে। কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও (আওয়ামী লীগ নেতা) নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালান।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার সকাল ৮টায়। তবে গতকাল রাতেই ভোটের প্রচারণা শেষ করেছেন প্রার্থীরা। আগামী রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বয়কট করেছে। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়াই জাতীয় পার্টি যেসব আসনে অংশ নিয়েছিল, তার প্রায় ৮৬ শতাংশ আসনেই জামানত হারিয়েছেন দলটির প্রার্থীরা।
সহিংসতার ঘটনা আছে:
ভোটের প্রচারে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে গতকাল বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সহিংসতার ঘটনা আছে। তবে খুব কম।
এবার ভোটের প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তুলনামূলক কমই ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো মোট ৫৮৯টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তবে অনুসন্ধান কমিটিগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে; তবে তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। কমিটিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয় ইসি। অবশ্য ইসি মনে করছে, এবার আগের তুলনায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা কম।
সংঘাত থামানো ও প্রার্থীদের আচরণবিধি মানতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশন শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কাজটি করতে পারলে সংঘাত-সহিংসতা আরও কম হতো।
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা:
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শনিবার মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ট্যাক্সিক্যাব, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।