November 23, 2024
মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবারের হাতেই জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ

মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবারের হাতেই জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ

মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবারের হাতেই জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ

মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবারের হাতেই জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ

দেশে ধনী-গরিবের আয় বৈষম্য বেড়েছে। সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবার জাতীয় আয়ের ৩০.০৪ শতাংশের মালিক। অন্যদিকে, সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় মাত্র ০.৩৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য রয়েছে। বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ২০১৬ সালে পরিচালিত পূর্ববর্তী বিবিএস জরিপে এই হার ছিলযথাক্রমে ২৭ দশমিক ৮২ এবং শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বৈষম্য দারিদ্র্যের চেয়েও গুরুতর সমস্যা। কারণ দারিদ্র্য কমছে। হয়তো এক পর্যায়ে কম হবে। কিন্তু বৈষম্য হয়তো কখনো শেষ হবে না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত ছিলেন না। তিনি একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. কাউসার আহমেদ, বিবিএস মহাপরিচালক মিজানুর রহমান। জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিবিএসের উপ-পরিচালক এবং খানা আয়-ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।

দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য তথ্য সরবরাহের জন্য জরিপটি পরিচালিত হয়েছিল। গত এপ্রিলে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ থেকে বিবিএস পরিবারের আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধনীদের মধ্যেও শহুরে-গ্রামীণ বৈষম্য রয়েছে। শহরের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশের আয় ৩৩.৪৮ শতাংশ। গ্রামের ২৪.২২ শতাংশ ধনী। আগের জরিপেও এই ব্যবধান ছিল। কিন্তু নতুন জরিপ দেখায় যে ব্যবধান আরও প্রশস্ত হয়েছে। ২০১৬ সালের জরিপে, সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় ছিল ২৭.৮২ শতাংশ। তখন শহরে এ ধরনের পরিবারের আয় ছিল ৩২.০৯ শতাংশ এবং গ্রামের ধনী পরিবারের আয় ছিল ২৪.১৯ শতাংশ।

জিনি সহগের মানের মাধ্যমে অসমতা পরিমাপ করা হয়। জিনি সহগ মান শূন্য (০) মানে সম্পূর্ণ সমতা বা অসমতা। সহগ বৃদ্ধির সাথে সাথে অসমতা প্রকাশ করা হয়। জরিপ অনুযায়ী ২০২২ সালে জিনি সহগ আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। জিনি সহগ মান শূন্য দশমিক ৪৯৯, যা আগের জরিপে ছিল শূন্য দশমিক ৪৮২ এবং ২০১০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। অর্থাৎ ১২ বছর ধরে দেশে বৈষম্য বাড়ছেই। আয় বৈষম্যের পাশাপাশি ভোগেও বৈষম্য বেড়েছে গত ছয় বছরে। ২০২২ সাল শেষে ভোগ-সম্পর্কিত জিনি সহগ শূন্য দশিমক ৩৩৪। এবং ২০১০ সালে শূন্য দশমিক ৩২১। অর্থাৎ ভোগের বৈষম্য ক্রমশ বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্য কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৮.৭ শতাংশ এখন দরিদ্র। ২০১৬ সালে পরিচালিত জরিপে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। একইভাবে চরম দারিদ্র্যও কমেছে। নতুন জরিপ অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্যের হার এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের জরিপে ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে চরম দারিদ্র্য কমেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

গৃহস্থালি ও মাথাপিছু আয় দ্বিগুণেরও বেশি। জরিপ অনুযায়ী, পরিবার প্রতি মাসিক আয় এখন ৩২ হাজার ৪২২ টাকা, যা আগের জরিপে ছিল ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংসারে ব্যয়ও বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। পরিবার পিছু মাসিক ব্যয় এখন ৩১ হাজার ৫০০ টাকা, যা ২০১৬ সালের আগের জরিপে ছিল ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা। মাথাপিছু মাসিক আয় এখন ৭ হাজার ৬১৪ টাকা, যা আগে ছিল ৬ হাজার ৯১ টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১ হাজার ৫২৩ টাকা।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড.শাহদীন মালিক  বলেন, রাজনীতি এখন লেনদেনে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার ব্যাপার। আগে রাজনীতি ছিল মূলত নীতি ও আদর্শ নিয়ে। এখন আর্থিক লেনদেনে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার হাতিয়ার এই রাজনীতি। যারা লেনদেনে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের সম্পদ ও সম্পত্তি স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে অনেকাংশে। ফলে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তাদের অনেকের সম্পদ আগামী পাঁচ বছরে আরও অনেক বাড়বে বলে নিশ্চিত করে বলা যায়। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এটাই মূলমন্ত্র। তাই এসব রাজনীতিবিদদের সম্পদ বৃদ্ধি দেখে জনগণের  কিছু  বলার কোনো উপায় নেই। আর এইভাবে চলতে থাকলে, চলতে  দিলে ধনী গরিবের বৈষম্য চরম আকারে পৌঁছবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X