November 23, 2024
তিন দেশের নাগরিক মিলে সুন্দরী নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে ফাঁদ হানিট্র্যাপ

তিন দেশের নাগরিক মিলে সুন্দরী নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে ফাঁদ হানিট্র্যাপ

তিন দেশের নাগরিক মিলে সুন্দরী নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে ফাঁদ হানিট্র্যাপ

তিন দেশের নাগরিক মিলে সুন্দরী নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে ফাঁদ: হানিট্র্যাপ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন দেশের নাগরিকরা গড়ে তুলেছেন ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ফাঁদ হানি ট্র্যাপ। গ্যাং সদস্যরা ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিক। ভারতীয় নারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশি পুরুষদের ফাঁদ তৈরি করে মেসেঞ্জারে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে ভারতীয় হানিট্র্যাপ চক্র। সম্পর্ক বাড়ার সাথে সাথে তারা নিয়মিত ভিডিও কলে কথা বলে। এভাবে ভিডিও কলে ধরা পড়ে অশ্লীল এবং আপত্তিকর। গোপনে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।

ভিকটিমকে এই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। বাংলাদেশ থেকে এই টাকা তোলার জন্য চক্রটি বাংলাদেশি এজেন্ট নিয়োগ করে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও ছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে মধুফাঁদ ফাঁদে ফেলে চক্রের সদস্যরা। তারা সাধারণ ছবি এডিট করে আপত্তিকর ছবি বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করত।

এই চক্রের দুই বাংলাদেশি এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম ও বিশেষ (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ টিপু সুলতান ও মোঃ মুসলিম রানা বুধবার বনানীর কড়াইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ রোববার দুপুরে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে বলেন, ফেসবুকে এক বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে এক ভারতীয় স্টুডেন্টের বন্ধুত্ব হয়। পরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং নিয়মিত ভিডিও কলে কথা বলার সময় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করে এক লাখ টাকা দাবি করে। ভিকটিম স্টুডেন্ট বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়ে নগ্ন ছবি ও ভিডিও মুছে দেওয়ার শর্তে প্রতারকের বিকাশ নম্বরে ৭ হাজার টাকা পাঠায়।

পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম সাউথ উইং তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ অপরাধের অনেক রহস্য রয়েছে। তারা দুজনই ছাত্র। টিপু রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও মুসলিম রানা তিতুমীর কলেজের স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র। চক্রটি কর্মচারী, ছাত্রসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাদতো। এরপর এডিট করা ছবি বা ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।

হারুন অর রশিদ বলেন, এই চক্রের মূল হোতা ভারতীয় শাকিল। তিনি বিভিন্ন লোন অ্যাপ থেকে টার্গেটেড ব্যক্তিদের যোগাযোগের নম্বর ও ফেসবুক লিঙ্ক সংগ্রহ করতেন। এরপর সুন্দরী তরুণীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদাবাজি করে। এবং এর জন্য তারা নকল UPI (ইন্সট্যান্ট রিয়েল-টাইম পেমেন্টস অন ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস) ব্যবহার করেছে। যার লিঙ্ক বাংলাদেশী এজেন্ট টিপুকে পাঠানো হয়েছিল। পাকিস্তানি এজেন্ট পারভেজের কাছে ইউপিআই পাঠায় টিপু। পারভেজ ভিকটিমদের ফোন করে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা পাঠাতো শাকিলের কাছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের ২৫ শতাংশ পেতেন এজেন্টরা।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ এডিসি মোঃ সাইফুর রহমান আজাদ জানান, আটক দুই শিক্ষার্থী একই এলাকায় বসবাস করে বলে জানা গেছে। দ্রুত সময়ে বেশি আয়ের আশায় তারা প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এরপর ভারতীয় নাগরিকদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বাংলাদেশীরা এই চক্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।

ভিকটিমদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আদায় করা অর্থের ২৫ শতাংশ রেখে ভারতীয় এজেন্টের কাছে পাঠিয়েছেন। অনলাইন ফাঁদ থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অপরিচিত কাউকে অনলাইনে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন না। এছাড়াও, ভিডিও কলে অপরিচিতদের সাথে কথা বলার সময় সতর্ক থাকুন। অনেকেই এই চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

উল্লেখ্য,

“হানি ট্র্যাপ”  বা  মধু ফাঁদ একটি তদন্তমূলক অনুশীলন যা আন্তঃব্যক্তিক, রাজনৈতিক (রাষ্ট্রীয় গুপ্তচরবৃত্তি সহ) বা আর্থিক উদ্দেশ্যে রোমান্টিক বা যৌন সম্পর্কের ব্যবহার জড়িত। মধু ফাঁদে এমন একজন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা জড়িত যার কাছে একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্য বা সংস্থান রয়েছে; ট্র্যাপার তখন টার্গেটকৃত ব্যাক্তিকে মিথ্যা সম্পর্কে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে (যা প্রকৃত পক্ষে  শারীরিকভাবে  জড়িত থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে) যাতে তারা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে বা লক্ষ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

“হানি ট্র্যাপ” শব্দটিও ব্যবহার করা হয় যখন ডেটিং সাইটগুলিএকটি ভিকটিমকে অ্যাক্সেস পেতে ব্যবহার করা হয়।

এটি  ব্ল্যাকমেইল করার  জন্য অপরাধমূলক ছবি তোলার উদ্দেশ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করার অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। একটি মধু ফাঁদ প্রাথমিকভাবে মধু ফাঁদের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। আবার  নতুন ব্যবহারকারীকে অবৈধ মাদকে বা নেশায় আসক্ত করার জন্য এবং মাদক চোরাচালানের জন্যও মধু ফাঁদ ব্যবহার করা হয়।

বন্ধুত্বের শুরু ফেসবুক থেকে। ধীরে ধীরে তা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে পরিণত হয়। ভিডিও কলে চ্যাটিং, এবং সেই উপলক্ষ্যে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তোলাকে মাধ্যম করে  ফাঁদে ফেলা হয়। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এভাবে প্রতারণা করে আসছে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X