৯০ পারসেন্ট লোককে দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবেঃ আ: লীগ প্রার্থীর কড়া নির্দেশ
আগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা নৌকার প্রার্থী অনেকেই তাদের বানানো নির্বাচন কমিশনের ধরা-বাধা নিয়মের কোন কিছুই তোয়াক্কা করছেনা । আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেই চলছে । তারই আরও একটি নিদর্শন গতকালের ঘটনা।
মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় শনিবার সকালে বক্তব্য রাখলেনন রাজবাড়ী-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. জিল্লুল হাকিম।
নির্বাচনে ৯০ শতাংশ ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে এবং ৯০ শতাংশ মানু দ্বারা নৌকা মার্কা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।
রাজবাড়ী-২ (পানশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জিল্লুল হাকিম ১৬/১২/২০২৩, শনিবার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন। সকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তার বক্তব্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। জিল্লুল হাকিম এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
রাজবাড়ী-১ (সদর ও গোলন্দ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী কেরমত আলীও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। কেরামত আলী বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। সভায় আরও ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সালমা চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফকীর আবদুল জব্বার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রমজান আলী খান, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আইনজীবী শফিক হোসেন প্রমুখ।
জিল্লুল হাকিম তার বক্তব্যে বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী করে এ দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হবে । তিনি বিএনপির উদ্দেশে বলেন, তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচন রোধ করবে। প্রতিহত করার ক্ষমতা কি বিএনপির আছে? প্রতিহত করার শক্তি থাকলে নির্বাচন আসত। কারণ, তাদের সাংগঠনিক কাঠামো সে পর্যায়ে নেই যেখানে তারা নির্বাচন করবেন। ওরা ঢাকায় আন্দোলনের ডাক দেয়, দেখো সেই চিহ্নিত মানুষগুলো ঢাকায় যায়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। আবার তারা এখনও বলছেন, নির্বাচন হবে না।
আরেক প্রার্থী কাজী কেরামত আলী বলেন, “কুচক্রী মহল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আপনাদের সবার কাছে দোয়া, আমরা যাতে আবারো দুটি আসনে জয়লাভ করতে পারি। আপনাদের সকল কর্মীদের কাছে অনুরোধ, নাবিক হিসেবে কাজ করুন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। শত ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাক, এটাই হোক আমাদের আজকের
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে রেলগেট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
১৮ ডিসেম্বর ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। সেদিন থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। জাতীয় পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। প্রতীক উল্লেখ করে ভোট চাওয়া নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য,
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের একাংশ) আসনের দুই প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ওই আসনের নির্বাচনী তদন্ত কমিটি আলাদাভাবে তাদের এ নোটিশ দিয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর, তাদের আচরণবিধি লঙ্ঘন সম্পর্কে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দিতে ব্যক্তিগতভাবে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এমপি সামিল শাদ্দীন আহমদের বাড়ির সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী প্যান্ডেল সভা করেছে। শুক্রবার সকালে প্রতীক বরাদ্দের আগে আচরণবিধি ভঙ্গ করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এ সভার আয়োজন করে। সভায় নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে অনেকেই বক্তব্য রাখেন। সভায় অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অভিনেত্রী মাহিয়া মাহিকে (শারমিন আক্তার নিপা) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন তদন্ত কমিটি। নোটিশে আগামী রবিবার সকাল ১১টায় তদন্ত কমিটির সভাপতির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে শাসরিকে।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে জেলা নির্বাচন তদন্ত কমিটির পক্ষে সুনামগঞ্জের যুগ্ম জেলা জজ (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল) রশিদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এম এ মান্নানের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়। এমএ মান্নানকে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এভাবে একের পর এক আচরণ বিল অংকন করেই চলছে নৌকার প্রার্থীরা।