জলপাই অপূর্ব স্বাদের টক ফল
জলপাই একটি ক্রান্তীয় টক ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Elaeocarpus serratus. এটি সিলন জলপাই নামেও পরিচিত । ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ, ইন্দোচীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফল উৎপন্ন হয়।
জলপাই গাছ মাঝারি আকারের, উচ্চতায় ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। শীতকালে পাতা ঝরে যায়, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে নতুন পাতা আসে। সেই সাথে আসে ছোট ছোট সাদা ফুল।
জলপাই তার ফলের জন্য বিখ্যাত হলেও এর ফুলের সৌন্দর্য অসাধারণ। গাছে গাছে অসংখ্য ফুলের মেলার সৌন্দর্য উপেক্ষা করা কঠিন। অফ-হোয়াইট ফুলের গুচ্ছ গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে ফোটে। ফল শরৎ এবং শীতকালে খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফলের বাইরের আবরণ তখন সবুজের কাছাকাছি একটি ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যযুক্ত রঙ ধারণ করে। এ কারণে জলপাই রঙ সবার কাছে বিশেষ রঙ হিসেবে পরিচিত। একটি ফলের ওজন মোটামুটি ১৫.৭৮ থেকে২২.৪৬ গ্রাম, জলপাইয়ের গঠন প্রায় আমড়ার মতো। কিন্তু আকারে আমড়ার চেয়ে ছোট। এর পাতলা আবরণের ভিতরে একটি ভোজ্য খোসা এবং একটি শক্ত বীজ থাকে।
কাঁচা ফলের খোসা সামান্য টক, যা এটি ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফলটি খনিজ, ভিটামিন, ফাইবার এবং মূল্যবান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
পুষ্টির মান:
প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের পুষ্টির মান হল ৭০ কিলোক্যালরি, ৯.৭ শর্করা, ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।
উপকারিতা:
ত্বক ও চুলের যত্ন:
অলিভ অয়েলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বক ও চুলের যত্নে কাজ করে। অলিভ অয়েল চুলের গোড়ায় লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হয়। এটি চুল পড়ার সমস্যা দূর করে। এছাড়াও জলপাই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের ক্ষতি রোধ করে।
হার্টের যত্নে:
মানুষের রক্তে ক্ষতিকারককোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। জলপাইয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ:
জলপাই ভিটামিন-ই এর একটি বড় উৎস।ক্যান্সারের জীবন ধ্বংস করে। ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। জলপাইয়ের ভিটামিন-ই অস্বাভাবিক কোষ গঠন রোধ করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
হজমে সাহায্য করে:
নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কমে বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
জলপাই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চোখের যত্ন:
জলপাইয়ে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ চোখের জন্য ভালো। যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারের প্রতি সংবেদনশীল তাদের জন্য জলপাই ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ, ফোলা চোখ, চোখের পাতার ইনফেকশনের সমস্যা দূর করে।
আয়রনের ঘাটতি দূর করে:
জলপাই আয়রনের একটি বড় উৎস। লোহিত রক্তকণিকা অক্সিজেন পরিবহন করে। কিন্তু শরীরে আয়রনের অভাব হলে অক্সিজেনের অভাব হয়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আয়রন শরীরের এনজাইমকে শক্তিশালী রাখে।বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে ।
পিত্তথলিতে পাথর জমতে বাধা দেয়:
জলপাই নিয়মিত খেলে পিত্তথলির পিত্ত সঠিকভাবে কাজ করে। পিত্তথলির পাথর গঠনের প্রবণতা কমে যায়।
আয়রনের উৎস:
জলপাই বিশেষ করে কালো জলপাই লোহার উৎস, আয়রন আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে এবং জলপাই প্রাকৃতিক আয়রনের সেরা উৎস।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে:
পানি ধারণ করা খাদ্যশস্য মানবদেহের হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হজমে সহায়তা করে।
অ্যালার্জি প্রতিরোধে:
গবেষণায় দেখা গেছে জলপাই অ্যালার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করে। জলপাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা ত্বকের সংক্রমণ এবং অন্যান্য ক্ষত সারাতে কার্যকর।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
জলপাই প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। সর্দি, জ্বর ইত্যাদি দূরে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হাড় ক্ষয় রোধ করে:
জলপাইয়ের মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনেকেই বয়সের কারণে হাড়ের ক্ষয় অনুভব করেন। অলিভ অয়েল হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
জলপাইয়ে থাকা ভিটামিন-ই ত্বককে মসৃণ করে। এ ছাড়া জলপাই ত্বকের ক্যান্সার থেকে বাঁচায়। এছাড়াও জলপাই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের ক্ষতি রোধ করে।
শীতকালীন ফল জলপাই। আর এই সময়ে বাজারে প্রচুর জলপাই পাওয়া যায়। জলপাই ভিটামিন, খনিজ এবং ভেষজ, আয়রন, ডায়েটারি ফাইবার, তামা, ভিটামিন-ই, ফেনোলিক যৌগ এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো পুষ্টিতে সমৃদ্ধ।
শীতকালীন ফল হওয়া সত্ত্বেও এর অপূর্ব স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সারা বছরই মানুষের মনে থেকে যায়। সে কারনে অনেকেই সারা বছর খাওয়ার জন্য জলপাইয়ের আচার ও চাটনি তৈরি করে থাকেন।