November 22, 2024
দুই রুটি খেয়েই দিন চলছে গাজাবাসীরঃ পানির খোঁজেও হাহাকার

দুই রুটি খেয়েই দিন চলছে গাজাবাসীরঃ পানির খোঁজেও হাহাকার

দুই রুটি খেয়েই দিন চলছে গাজাবাসীরঃ পানির খোঁজেও হাহাকার

দুই রুটি খেয়েই দিন চলছে গাজাবাসীরঃ পানির খোঁজেও হাহাকার

গভীর মানবিক সংকটে ফিলিস্তিনের গাজা। শরণার্থী শিবিরগুলিও ইসরায়েলি আক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।আর এসব হামলায় বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। মাসব্যাপী হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে খাদ্য, পানি, বাসস্থান ও বিদ্যুতের সংকটে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

খাদ্য ও পানির অভাবে ভুগছে মানুষের একমাত্র খাদ্যের উৎস শুকনো রুটি। বেশির ভাগ গাজাবাসী মাত্র দুটি রুটি  খেয়েই বেঁচে থাকছে। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) এভাবেই ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের করুণ পরিস্থিতি সামনে আনলেন গাজার জন্য জাতিসংঘের সংস্থার পরিচালক টমাস হোয়াইট।

ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় সাহায্য কর্মকর্তা বলেছেন যে গাজার ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘের মজুদকৃত আটা দিয়ে তৈরি আরবি রুটির দুই টুকরোতেই  খাবার শেষ  করছে। এখন রাস্তায় গাড়ি থামলেই শোনা যায় ‘পানি পানি’ চিৎকার।

টমাস হোয়াইট গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পুরো গাজা উপত্যকা চষে বেড়াচ্ছেন। গাজাকে ‘মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্য’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আজ এখানে কোনো স্থান নিরাপদ নয়। লোকেরা তাদের জীবন, তাদের ভবিষ্যত এবং তাদের পরিবারকে খাওয়ানোর ক্ষমতা নিয়ে ভয় পাচ্ছে।

একটি ভিডিও ব্রিফিংয়ে, হোয়াইট জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বলেছিলেন যে ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজা জুড়ে প্রায় ৮৯ টি বেকারিকে সহায়তা করছে। যার লক্ষ্য ১৭ লাখ মানুষকে রুটি দেওয়া। কিন্তু মানুষ এখন রুটি খোঁজার আগেই পানি সংগ্রহ করতে মরিয়া। গাজায় পানির সংকটের একটি কারণ হলো সেখানে একটি মাত্র পানীয় জলের লাইন চালু আছে।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্যের উপ-মধ্যপ্রাচ্য সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস বলেন, অধিকৃত ইসরায়েলের তিনটি পানি সরবরাহ লাইনের মধ্যে মাত্র একটি চালু রয়েছে। পানির অভাবে অনেক মানুষ লোনা সমুদ্রের পানি ও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল।

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, এই সংকট সমাধানে আলোচনা চলছে।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গাজায় জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েল, মিশর, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

জাতিসংঘের প্রধান হেস্টিংস বলেন, হাসপাতাল, পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র, খাদ্য উৎপাদন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা চালাতে জেনারেটরের প্রয়োজন। কিন্তু জ্বালানি সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ায় একের পর এক জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গাজাবাসী শরণার্থী শিবিরেও মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

হেস্টিংস বলেন, গাজায় গড়ে ৪,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ স্যানিটেশন ছাড়াই স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছে। অবস্থা ভয়াবহ। মহিলা ও শিশুরা ক্লাসরুমে এবং পুরুষরা বাইরে খোলা জায়গায় ঘুমায়।ইসরায়েলি বোমা হামলার ভয়ে তারা রাত কাটাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের শীর্ষ সহায়তা কর্মকর্তা টমাস হোয়াইট বলেছেন, জাতিসংঘ গাজার জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। ইসরায়েলি বাহিনীর সরাসরি পাঁচটি আঘাতে ৫০টি ইউএনআরডব্লিউএ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেষ গণনায়, আমাদের আশ্রয়ে ৩৮ জন মারা গেছে। আমি আশঙ্কা করছি, উত্তরে এই মুহূর্তে লড়াই চলছে এবং এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে চলেছে। .

মানবাধিকার প্রধান গ্রিফিথস বলেছেন, গাজার জনগণের সেবা করতে গিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে ৭২ জন ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী নিহত হয়েছেন। আমি মনে করি জাতিসংঘের কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা যেকোনো সংঘাতের মধ্যে সর্বোচ্চ।

জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ব্রিফিংয়ে দেখা গেছে, শরণার্থী শিবিরের মানুষ মৌলিক চাহিদা ও পর্যাপ্ত পানির অভাবে ভুগছে। ক্যাম্পে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই।

কুর্দি নিউজ আউটলেট রুদা জাতিসংঘ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন শরণার্থীর সঙ্গেও কথা বলেছে।

উত্তর গাজার এক  বাসিন্দা ফাতিমা রাদওয়ান বলেন, “আমাদের পরিস্থিতি খুবই গুরুতর।” এখানে পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই, শিশু ও বৃদ্ধদের দেখাশোনারও কোনো জায়গা নেই। এমনকি টয়লেটে যেতে অনেক দূর হেঁটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। ‘

গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা ইসমাইল আল-জাবালি বলেন, ‘আমাদের পানির বোতল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। টয়লেটে যাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে।’

আসমা আল-ওস্তাদ বলেন, “বর্তমানে আমরা কঠিন জীবনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বসার বা ঘুমানোর জন্য কোনো গদি নেই, আমরা প্লাস্টিকের ব্যাগে মাথা রেখে ঘুমাই। দিনের বেলা তাঁবুগুলো খুব গরম থাকে। রাতে আমাদের খুব ঠান্ডা লাগে। কারণ আমরা মাটিতে ঘুমাই । আর তাঁবুগুলো পুরানো হওয়ার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি , আমরা ঘরে ফিরতে চাই।

উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলি সামরিক অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,৭৭০। অবরুদ্ধ এলাকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা গাজা শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে।৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২৬ , ০০০ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকারদের ৭০ শতাংশই শিশু, নারী ও বয়স্ক । গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলিদের হামলার ফলে ১৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছে এবং ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে।

ইসরায়েল “ইচ্ছাকৃতভাবে ১০৫টিরও বেশি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করছে।” ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তু এবং জ্বালানি সংকটের কারণে ১৬ টি হাসপাতাল এবং ৩২ টি প্রাথমিক যত্ন কেন্দ্র পরিষেবার বাইরে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গাজার হাসপাতালগুলো আহত মানুষ এবং বিপজ্জনক ঘটনা দ্বারা সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন। আহতদের অনেকেই প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। কারণ গাজার হাসপাতালগুলোতে তাদের জন্য কোনো থেরাপিউটিক হস্তক্ষেপ নেই।

আরও পড়তে

ইসরায়েলের নির্মম নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না ফিলিস্তিনি শিশুরাও

ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ

ফিলিস্তিনি বন্দিদের হত্যা করতে জঘন্য বিল পাস উগ্র ইসরাইলি পার্লামেন্টে

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X