ফিরিঙ্গি বধের পর পাকিস্তানকেও হারালো আফগান ক্রিকেটাররা
আফগানিস্তান ক্রিকেট দল:
{আফগানিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্বকারী দল। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ১৯৯৫সালে গঠিত হয়। আফগানিস্তান ২০০১সালে আইসিসির সহযোগী সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ২০০৩ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সদস্য হয়। ২০০১সালে প্রথম জাতীয় দল গঠিত হয়। ২০০৯ সালে, তারা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করে। ২০১০ সালে আফগানিস্তান স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতেছিল। তারা ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে গ্রুপ সি-তে খেলেছিল। ভারতের বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচে নূর আলীর হাফ সেঞ্চুরিতে ১১৫ রান করলেও তারা ৮ উইকেটে ম্যাচ হেরে যায়। ২য় ম্যাচেও তারা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৫৯ রানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়। ২০১১ সালে, আফগানিস্তান T২০ র্যাঙ্কিংয়ে নবম স্থানে ছিল।আফগানিস্তান ২০১১ বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেনি কিন্তু ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪বছরের জন্য একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ২০০৯ সালে, আফগানিস্তান ACC টি-২০ কাপে খুব ভাল খেলেছিল, তাদের গ্রুপের পাঁচটি ম্যাচ জিতেছিল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ফাইনালে ৮৪ রানেপরাজিত করে শিরোপা জিতেছিল।}
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস জিতেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু ব্যাটিং স্বর্গে ফিল্ডিং বেছে নেন ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলার। দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির ম্যাচে বড় প্রভাব ফেলবে ভেবে আফগানদের ব্যাট করতে পাঠায় তারা। কিন্তু সেভাবে ঘটেনি। ইংলিশ ব্যাটারদের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে আফগান স্পিনাররা। শেষ পর্যন্ত মৌসুমের প্রথম ফিরিঙ্গি (ইংল্যান্ড) বধ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।
ইংল্যান্ডের পরে ধরাশায়ি করলো পাকিস্তানকেও । পাকিস্তানের সীমান্তে অনেক শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী থাকলেও সেটা টপকে পাকিস্তানকে নিচে নামিয়ে দিতে সামান্য মাত্র কষ্টই যেন হলো না আফগান ক্রিকেটারদের ।
যদিও পূঁজিটা ছোট ছিল না। কিন্তু দিনটি পাকিস্তানের জন্য ছিল না। যে কারণে সোমবার চেন্নাইয়ে ২৮২ রান করেও পার পায়নি বাবর আজমের দল। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে, বিশেষ করে তাদের বোলারদের কাছে হারে দল এতটাই অভিভূত হয়েছিল যে, আফগানিস্তানের মতো দল, সেই ২৮২ রান তাড়া করে, ৬ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে জিতেছিল।
আগের সাতটি দেখায় যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় ছিল না, কয়েকটি ম্যাচে লড়াই গড়তে পারাই ছিল প্রাপ্তি, সেই আফগানিস্তানই এবার পাকিস্তানের সাথে গর্জে উঠল। দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শনের পর দুর্দান্ত ব্যাটসম্যানের মতো পারফর্ম করে পাকিস্তান-বধ কাব্য লিখেছেন আফগানিস্তান । যদিও এই বিশ্বকাপে তাদের শুরুটা ছিল হতাশাজনক।
তবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ফিরে পায় হাসমতউল্লাহ শাহিদির দল। এরপর থেকে আরও চমকের অপেক্ষায় ছিল দলটি। আগের ম্যাচে ব্যর্থ হলেও আজ মজার চমক দেখাল তারা।
আফগানদের সামনে পাকিস্তানকে অসহায় দেখিয়েছেন বাবর আজম। ব্যাটিং যে খুব খারাপ হয়েছে তা নয়। ইমাম-উল-হক মাত্র ১৭ রান নিয়ে বিদায় নিলেও আবদুল্লাহ শফিকের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটি ছিল ৫৬ রানে। এরপর অধিনায়ক বাবর আজমের সঙ্গে ব্যক্তিগত ৫৮ রানে সাজঘরে ফেরেন শফিক, এরপর দুরন্ত ফর্মে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান দ্রুত ফিরলে স্বাভাবিক গতি হারায় পাকিস্তানের ইনিংস। । বাবর এক প্রান্তে যুদ্ধ করতে থাকে। দলকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দিয়ে পাকিস্তান দলপতি ফেরেন ৭৪ রান করে।
বাবর ফেরার পর শাদাব খান ও ইফতেখার আহমেদ দলের রান বাড়িয়ে দেন। শেষ আট ওভারে রানের বন্যা বইয়ে দেন দুজনে। ইফতেখার ২৭ বলে ৪০ রান করেন, শাদাবও শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন। তবে ব্যাট নয়, বোলিংয়ে তার কাছ থেকে বেশি প্রত্যাশা ছিল পাকিস্তানের। সেই জায়গায় এক ফোঁটাও সে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পারেননি পাকিস্তানের কোনো বোলারই । আসলে আফগান ব্যাটাররা তাদের যেতে দেয়নি। রহমানুল্লাহ গুরুবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ এবং শাহিদি এত নিখুঁত ব্যাটিং করেছেন যে ম্যাচে পাকিস্তানের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র ছিল ।
গুরবাজ ও ইব্রাহিম ১৩০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ম্যাচের পথ নির্ধারণ করেন। ৫৩ বলে ৬৫ রান করা গুরবাজের বিদায়ের পরও আফগান ব্যাটিং লাইনআপ হেরে যাবে বলে আশায় ছিলেন পাকিস্তানি সমর্থকরা। সেই আশায় গুরেবালি। ইব্রাহিম ও রহমতের চওড়া ব্যাট তাদের দলকে স্মরণীয় জয়ে নিয়ে যায়। সেঞ্চুরির পথে ছিলেন ইব্রাহিম। কিন্তু ভালো খেলতে থাকা এই ওপেনার হাসান আলীর কাছে হেরে যান। ৩৪ তম ওভারে সাজঘর যখন উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন, তখন তার ১১৩ বলে ৮৭ রান ছিল, দলের সংগ্রহ ১৯০ ।
এরপর হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন রহমত। ক্যাপ্টেন শাহিদিও তাকে চওড়া ব্যাটে দারুণ সমর্থন দেন। পাকিস্তানি বোলাররা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন তাদের আজ আর কিছু করার নেই। তারা এমনভাবে বোলিং করছিল যেন তারা হেরে যাচ্ছে। হার তাদের কঠিন সমীকরণে ঠেলে দিয়েছে। সেমিফাইনালে যেতে হলে তাদের পরের চারটি ম্যাচই জিততে হবে।
আরও জানুন
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে আফগানিস্তানের ইতিহাস
ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের খাবারের মেনুতে নেই গরুর মাংস