October 31, 2024
পবিত্র কোরআন অবমাননায় জাতিসংঘে প্রতিবাদে মুখর তুরস্ক, ইরান ও কাতার

পবিত্র কোরআন অবমাননায় জাতিসংঘে প্রতিবাদে মুখর তুরস্ক, ইরান ও কাতার

পবিত্র কোরআন অবমাননায় জাতিসংঘে প্রতিবাদে মুখর তুরস্ক, ইরান ও কাতার

পবিত্র কোরআন অবমাননায় জাতিসংঘে প্রতিবাদে মুখর তুরস্ক, ইরান কাতার

গত কয়েক মাসে কয়েকবার সুইডেনে পবিত্র কোরআনের কপি পোড়ানোর ঘটনায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এমন জঘন্য ঘটনার জন্য তুরস্ক, কাতার ও ইরানের প্রেসিডেন্ট পশ্চিমাদের নিন্দা জানিয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তার বক্তৃতায় কোরআন হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করেন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে ৭৮ তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি পৃথক বক্তৃতায় কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

গত কয়েক মাসে, সুইডেন এবং ডেনমার্কে প্রকাশ্যে ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দুই দেশের সরকার এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। মুসলিম দেশগুলোর নেতারা বলছেন, কোরআন পোড়ানো কোনো মত প্রকাশের মাধ্যম হতে পারে না।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান জাতিসংঘে- বলেছেন যে বিষয়টি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটা খুবই দুঃখজনক যে অনেক দেশের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদরা এই ধরনের বিপজ্জনক প্রবণতাকে উৎসাহিত করে আগুন নিয়ে খেলছেন।

ক্ষুব্ধ তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “বাক স্বাধীনতার আড়ালে ইউরোপে পবিত্র কোরআনের বিরুদ্ধে জঘন্য হামলাকে উৎসাহিত করার মানসিকতা মূলত ইউরোপ নিজেদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।”

একই দিনে জাতিসংঘে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি কোরআনে চুম্বন করেন। তিনি বলেন, ইসলামোফোবিয়া এবং সাংস্কৃতিক বর্ণবাদের মতো ঘটনা পশ্চিমা দেশগুলোতে দেখা যায়। যেমন  পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননা থেকে শুরু করে পশ্চিমা দেশগুলোর স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করা।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকার সম্প্রতি ফরাসী স্কুলে হিজাব ও আবায়া পরা নিষিদ্ধ করেছে। এ সময় এরদোগান এর প্রতিবাদ করেন।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামিদ আল থানি অধিবেশনে তার বক্তৃতায় বলেছিলেন যে কুরআন পোড়ানোর মতো জঘন্য কাজ কেবল একজন অসাধু ব্যক্তিই করতে পারে।

ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মরক্কো সহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কুরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। এ বিষয়ে ৫৭ সদস্যের অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের জরুরি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, সুইডেনে বেশ কয়েকবার কোরান পোড়ানো হয়েছে। গত এপ্রিলে, স্টর্ম কুরস নামক একটি উগ্র ডানপন্থী দল মালমোতে একটি কুরআন পোড়ায়, যা সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ডেনমার্ক ও সুইডেনের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দল Sträm Kurs অভিবাসন বিরোধী এবং ইসলাম বিরোধী বলে পরিচিত। সংগঠনটির প্রধান রাসমুস পালুদান নামে এক চরমপন্থী। এই বছরের জানুয়ারিতে এবং ২০২০ সালে সুইডেনে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

সুইডিশরা ১৬-১৭  শতকে প্রথম ইসলামের সাথে পরিচিত হয়েছিল, যখন দেশটি সামরিক শক্তি অর্জন করছিল। সুইডিশ সাম্রাজ্যের প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে এর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিও বেড়েছে। যদিও সুইডিশরা মূলত ক্যাথলিক ছিল, দেশটি ১৬ শতকে লুথেরান প্রোটেস্ট্যান্ট দেশে পরিণত হয়েছিল। ১৬৬৫ সালে সুইডিশরা তার পিতৃপুরুষের ধর্মকে অবৈধ ঘোষণা করে।

সে সময় ক্যাথলিক ও মুসলমানদেরকে ‘প্রকৃত খ্রিস্টান ধর্মের’ শত্রু হিসেবে দেখা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সুইডেনে উদার চেতনার বিকাশ ঘটে। ধর্মনিরপেক্ষ আইনে দেশ পরিচালিত হয়।

তবে বর্তমান সময়ে সুইডিশ ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর মুস্তাফা মনে করেন, সুইডিশদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। তিনি বলেন, সুইডেনে ইসলামোফোবিয়া বাড়ছে। আর এর বহিঃপ্রকাশ শুধু ইন্টারনেটেই নয়, বাস্তবে তা মুসলমানদের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটছে।

সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনার পর তিনি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তায় মুসলিম নারীদের হয়রানি, মুসলমানদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া এবং মসজিদে লুকিয়ে হামলা করা ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে সুইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টি মূলত একটি অতি-ডানপন্থী দল যারা একসময় নাৎসি মতাদর্শে বিশ্বাস করত। কিছুটা হলেও, তারা এখনও বর্ণবাদী এবং অভিবাসী বিরোধী। ফলস্বরূপ, উগ্র ডানপন্থী দলগুলি যেগুলিকে একসময় ‘ফ্রিঞ্জ’ গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করা হত এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এসব ডানপন্থী দল পরিকল্পিতভাবে সুইডিশ সমাজে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ‘ট্যাবু’ বা নিষিদ্ধ, তারা সেটা ভাঙতে চায়।

বার্কলে পলিটিক্যাল রিভিউ-এর একটি নিবন্ধে বিখ্যাত লেখক জুডি সাফিন লিখেছেন, শুধু সুইডেনে নয়, সারা বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া বাড়ছে। বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাকের মতো দেশের মুসলিমরা যারা নিজেদের দেশে যুদ্ধাপরাধ ও আর্থিক সংকটের শিকার হয়েছে। ‘জেনোফোবিয়া’ বা বিদেশীদের ভয় বিভিন্ন দেশে শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী অনুভূতির সাথে যুক্ত। মানুষ এখন তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়, জীবিকা এমনকি নিরাপত্তা হারানোর ভয়ে ‘অন্যদের’ সাহায্য করতে অস্বীকার করে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে সুইডেনেও একই অবস্থা।

আরও পড়তে

কোরআন পোড়ানোর ঘটনার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট দেয়া, না দেয়া দেশগুলো চিনে রাখি

পবিত্র কোরআন অবমাননার দায়ে দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরান

সুইডেনে অবস্থিত তুরস্ক দূতাবাসের সামনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ তুরস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X