সমঝোতা করবেন না ইমরান খানঃ ছাড়বেন না পাকিস্তানওঃ পারবেন কি সামনের নির্বাচনে অংশ নিতে?
ইমরান আহমেদ খান নিয়াজি (ইমরান খান ৫অক্টোবর, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবেজন্মগ্রহণ করেন)। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক খেলোয়াড় এবং পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক। খেলার পর তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ব ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। ১৯৯২ সালে তার নেতৃত্বেই বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। তিনি ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১০ এপ্রিল, ২০২২ -এ অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধানের আইনি দলের সদস্য উমিয়ার নিয়াজি কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেছেন। এদিকে ইমরান খান তাকে বলেন, “আমি (জেলারদের) সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া নিয়ে চিন্তিত নই। তারা আমাকে ১০০০ বছরের জন্য কারাগারে রাখলেও তাতে কিছু যায় আসে না, তবে আমি এর জন্য প্রস্তুত কারণ আমি স্বাধীনতাকে বলি দিতে পারিনা। ‘
রাষ্ট্রীয় উপহার (তোশাখানা) বিক্রি থেকে আয় গোপন করার দায়ে ৭০ বছর বয়সী ইমরান খানকে ৫ আগস্ট একটি দায়রা আদালত তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। বর্তমানে তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের অ্যাটক কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
গুজব ছিল যে জেলে বন্দী ইমরান খান ক্ষমতাসীন দলের সাথে চুক্তিতে আছেন এবং বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে এমন গুজবকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি আইনজীবীকে বলেন, মুক্তির বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। কখনো দেশ ছেড়েও যাবেন না তিনি।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান পাকিস্তান ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এমনকি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে তিনি কোনো ধরনের আপস করবেন না বলেও জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে অ্যাটক কারাগারে বন্দী এবং সেখানে তার সাথে দেখা করার পর আইনজীবীরা এই দাবি করেন। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো।
কারাবন্দী পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান তার মুক্তির জন্য কোনোরকম আপস অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি কখনই পাকিস্তান ছেড়ে যাবেন না, তার আইনজীবীরা দাবি করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পরে, তিন একথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
শনিবার কারাগারে ইমরানের সঙ্গে তার আইনজীবীরা দেখা করেন। পরে কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় অ্যাডভোকেট শোয়েব শাহীন বলেন, ইমরান খান কোনো চুক্তি বা সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন এবং তার জনপ্রিয়তাকে কলঙ্কিত করার জন্য তার বিদেশে স্থায়ী হওয়ার ধারণাটিকে ভিত্তিহীন প্রচার বলে অভিহিত করেছেন।
আইনজীবীর মতে, ইমরান খান বলেছেন- বিদেশে তার কোনো সম্পদ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। এছাড়াও, পিটিআই চেয়ারম্যান পাকিস্তানে আগাম, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এবং যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তবে এই নির্বাচনকে ‘দেশের সমস্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটের জন্য ওষুধ’ বলে অভিহিত করেছেন।
জাতির উদ্দেশ্যে তার বার্তায় ইমরান খান জনগণকে তাদের অধিকারের জন্য দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। অ্যাডভোকেট শাহীনের মতে, ইমরান কখনোই সামরিক কৌশলের কাছে মাথা নত করবে না এবং ১০০০ বছরের জেল খাটতে প্রস্তুত তিনি ।
এর বাইরে বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার আরও বলেছেন যে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির মধ্যে তিনি পাকিস্তানের জনগণের জন্য চিন্তিত। আইনজীবী আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৮০টি মামলার সবকটিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী শোয়েব শাহীন আরও জানান, বাকি মামলায় শিগগিরই ইমরানের জামিনের আবেদন করবে আইনজীবীদের দল।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গত মাসে দুর্নীতির একটি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি ইসলামাবাদ হাইকোর্ট সাজা স্থগিত করেছে। যদিও ইমরান এর আগেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ ছাড়া ইসলামাবাদ হাইকোর্ট দুর্নীতি মামলার রায় স্থগিত ঘোষণা করে ইমরানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই রায়কে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক তারকা ক্রিকেটারের বড় রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে গোপন তার ফাঁসের ‘গুরুতর অপরাধে’ ইমরান এখনও অ্যাটক কারাগারে বন্দী।
আরও জানুন
টুইটার জরিপে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন
ইমরান খানকে রাখা হয়েছে যেই কুখ্যাত কারাগারে
উল্লেখ্য, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেওয়া ৩ বছরের কারাদণ্ড স্থগিত করেছে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ইসলামাবাদ হাইকোর্টও সাজা স্থগিত করে ইমরানের মুক্তির নির্দেশ দেয়। তবে সরকারি গোপন ওয়্যার ফাঁস মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি।
যেদিন ইমরান খানকে কারাগারে সাজা দেওয়া হয়, সেদিনই ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালত তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অযোগ্য ঘোষণা করে এবং তাকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে। সেই সাজা স্থগিত হওয়ার পর, অনেকে মনে করেছিলেন – ইমরানকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে – অযোগ্যতাও উঠে গেছে।
তবে, পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবী মির্জা মইজ বেগ বলেছেন যে সাজা স্থগিত করা হলেও ইমরান এখনও নিরবাচনে দাঁড়ানোর অযোগ্য।
এই আইনজীবী বলেছেন, “এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শুধুমাত্র সাজা স্থগিত করা হয়েছে, তোশাখানায় দুর্নীতির জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েই গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানের সংবিধান অভিযুক্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেয়।” সে হিসেবে ইমরান খান নির্বাচনের অযোগ্য রয়ে গেছেন। এছাড়া তিনি তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্বও দিতে পারবেন না।’
আরেক আইনজীবী মিয়া দাউদ বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পাশাপাশি ইমরানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও ঝুলে আছে।
তিনি বলেন, “তার তিন বছরের কারাদণ্ড বাতিলের বিষয়টি এখনও সমাধান হয়নি।” এই অভিযোগ থেকে শুধু সাজা স্থগিত হবে না, তিনি খালাস পেলে তবেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।