November 22, 2024
যৌবন কাল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

যৌবন কাল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

যৌবন কাল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

যৌবন কাল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

যৌবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। স্বপ্ন, আকাঙ্খা, শক্তি ও সম্ভাবনায় ভরা যৌবনের দিনগুলো আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের যৌবনে এমন সব নেয়ামত দান করেন, যার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা সম্ভব নয়। আর আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। তাই যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করা।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিভিন্নভাবে যুবকদের মূল্যায়ন করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তারুণ্যকে লালন করার আহ্বান জানান তিনি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বললেন, পাঁচটি জিনিস আসার আগে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়ন কর।

  • এক. বার্ধক্যে পৌঁছানোর আগেই যৌবন।
  • দুই. অসুস্থতার আগে সুস্থতা।
  • তিন. দারিদ্র্যের আগে আত্মনির্ভরশীলতা।
  • চার. কাজের আগে অবসর।
  • পাঁচ. মৃত্যুর আগে জীবন।’

(শুআবুল ঈমান)

উপরোক্ত হাদিসে যে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে, তার সবই একজন যুবকের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়। জীবনের সোনালী সময়কে মজা ও খেলায় নষ্ট করা প্রকৃত মুসলমান যুবকদের দায়িত্ব নয়।

পাপমুক্ত জীবন গঠন

পাপমুক্ত জীবন যাপনের জন্য যৌবনকে পাহারা দিতে হবে। বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যৌবনে চোখের যত্ন খুবই জরুরি। চোখ ও গোপনাঙ্গের সুরক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালা কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বললেন, ‘মুমিনদের বলুন যেন তারা তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গের হেফাজত করে… এবং মুমিন নারীদেরকে বলুন তাদের দৃষ্টি নত রাখতে এবং তাদের গোপনাঙ্গের হেফাজত করতে। (সূরা নূর, আয়াত: ৩০-৩১)

এ ছাড়া তরুণদের নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই নিজেকে সব ধরনের অপরাধ থেকে দূরে রাখুন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্নীতি সহ  সব  অপকর্মই   ইসলামে নিষিদ্ধ। সুন্দর  যৌবন ধরে রাখতে পাপমুক্ত জীবন যাপনের বিকল্প নেই।

হৃদয়ের পরিশুদ্ধি

যৌবনের প্রাইম সময়ে পাপ এবং অশ্লীলতা সবচেয়ে বেশি হয়। তাই যুবকদের আত্মার যত্ন ও পরিশুদ্ধি প্রয়োজন। চিন্তা ও আদর্শের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে একটি অবাধ্য মন সর্বদা বিপথগামী হবে। অতএব, নিজেকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য, যুবককে অবশ্যই একটি উন্নত হৃদয় ও মন থাকতে হবে। অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার উপকারিতা এবং অপবিত্রতার কুফল বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে সে সফল এবং যে তার আত্মাকে অপবিত্র করে সে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা আশ-শামস, আয়াত ৮-৯)

একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মার পবিত্রতার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেছেন, ‘সাবধান! মানবদেহ একটি মাংসের টুকরো, যখন এটি সুস্থ থাকে তখন সমস্ত শরীর সুস্থ থাকে এবং যখন এটি অসুস্থ হয় তখন সমস্ত শরীর অসুস্থ হয়। জেনে রেখো, এটাই হল ক্বলব বা অন্তর।’ (মুসলিম)

বিবাহ

পাপহীন জীবনের বড় বাধা যৌবনের প্রলোভন। কারণ নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণ স্বাভাবিক। এ কথা নিশ্চিত করে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। (সূরা নাবা, আয়াত 8) তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে কঠোর ভাবে  নিষিদ্ধ। জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহ বিবাহের এক অনন্য ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। এটি পৃথিবীতে মানব ঐতিহ্য রক্ষার একমাত্র নৈতিক হাতিয়ার। তাই সক্ষম যুবকদের বিয়ে করা উচিত। ইসলাম প্রয়োজন সত্ত্বেও তা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিবাহ বিলম্বিত করার অনুমতি দেয় না। তবে রাসুল (সাঃ) সামর্থ্য না থাকলে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

যুবকদের উদ্দেশে মহানবী (সা.) বলেছেন, হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং শালীনতা রক্ষা করে এবং যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা রাখে। কারণ রোজা তার যৌনতাকে দমন করবে। (বুখারি)

ইবাদতে মগ্নতা

যৌবনকাল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়। সামর্থ্যবানরাই পূর্ণ একাগ্রতার সাথে ইবাদত করতে পারে। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া এবং রাতে দীর্ঘ সময় আল্লাহর ইবাদত করা সম্ভব। যৌবনে ইবাদতকারীদের পুরস্কার ঘোষণা করেছেন রাসুল (সা.)। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কিয়ামতের দিন সাত প্রকার মানুষকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, সেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। এক. একজন ধার্মিক রাজা। দুই. আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন যুবক…’ (বুখারি)

নেতৃত্ব গ্রহণ করা

যুব সমাজকেই  নেতৃত্ব নিতে হবে। মানুষকে সত্যের পথে পরিচালিত করতে হবে। এই উদ্দেশ্যেই মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহতায়ালা নবুয়তের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। প্রিয়নবী (সা.)-কে পাঠানোর উদ্দেশ্য বর্ণনা করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদেরই একজনকে তোমাদের রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদের কাছে আমার বাণী পাঠ করবেন এবং তোমাদের পরিশুদ্ধ করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তার তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫১)

তাই সমাজের নেতৃত্ব নিতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষায় জাতিকে সমৃদ্ধ করে সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে হবে।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

অন্যায়ের প্রতিবাদে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মহানবী (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব ও দায়িত্ব তরুণদের ওপর অর্পণ করেছিলেন। ইয়াজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিতেও পিছপা হননি হুসাইন (রা.)। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যৌবনে নমরুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তিনি মূর্তিপূজা সহ সকল অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার কথা উল্লেখ করে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা এক যুবককে এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করতে শুনেছি। তাকে ইব্রাহিম বলা হয়। (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ৬০)

হালাল উপার্জন

একজন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের দায়িত্ব স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ও পিতামাতার যত্ন নেওয়া এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। তাই তাকে উপার্জন করতে হবে। তবে এ আয় হালাল হওয়া অপরিহার্য। হারাম উপার্জন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সুদ, ঘুষ এবং পাপ দ্বারা উপার্জন ইসলামে জায়েজ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, পৃথিবীতে যা হালাল ও পবিত্র খাবার রয়েছে তা থেকে খাও। শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা: আয়াত ১৬৮ )

হারাম উপায়ে অর্জিত খাদ্যের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হারাম খাদ্যে যে শরীর পুষ্ট হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বায়হাকী)

পরকালের কথা চিন্তা করে যৌবনের সৌন্দর্য  বৃদ্ধি করা

যৌবনের রঙিন দিনে আমরা পরকালের কথা ভুলে যাই। মহান প্রভুর কথা ভুলে যান; তার আদালতে জবাবদিহিতা। মৃত্যুর পর আমাদের সব কাজের জবাব দিতে হবে। তাই যুবসমাজকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে পরকালের কথা বেশি করে চিন্তা করা জরুরি। পরকালের ভয় যৌবনকে অপরাধবোধ থেকে মুক্তি দেয়।

কিয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের যুবকদের সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন কোনো ব্যক্তিকে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন করার পূর্বে আল্লাহর কাছ থেকে তার দুই পা সরাতে পারবে না।

  • এক. তার জীবনকাল সম্পর্কে কীভাবে অতিবাহিত করেছে।
  • দুই. তার যৌবনকাল সম্পর্কে কী কাজে তা বিনাশ করেছে।
  • তিন. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে।
  • চার. এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে।
  • পাঁচ. সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে তা সম্পর্কে।’ (তিরমিজি)

 

আরও পড়ুন

হাদিসের আলোঃ মানবজীবনের অমূল্য ৫টি সম্পদ

জিন কি মানুষের উপর ভর করতে পারে?

স্ত্রী, স্বামীর কোন পাশে ঘুমান সুন্নত?

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X