নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করবেঃ আতঙ্কে বাংলাদেশী ব্যবসায়িক বুদ্দারা
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরপরই আতঙ্ক শুরু হয়। তবে এ ঘোষণার প্রভাব মূলত সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউ-এর সফর এবং মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এখন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সম্পদ বাজেয়াপ্তের আশঙ্কাও বাড়ছে । মূলত ব্যবসায়ী মহলে এই আতঙ্ক বেশি দেখা যায়।
বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় এক ডজন ব্যবসায়ী তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন । মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পদ বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় সকলেই নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, সম্প্রতি এক বড় ব্যবসায়ীর বিদেশে সম্পদের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওই ঘটনার আগেও গুঞ্জন উঠেছিল কিছু বড় ব্যবসায়ী দুই দেশে ঢুকতে পারেননি। তা বিবেচনায় না নিলেও পররাষ্ট্র দফতরের গ্লোবাল অ্যান্টি-করপশন কো-অর্ডিনেটর রিচার্ড নেফিউ-এর সফরের সময় নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের ইঙ্গিত পাওয়ার পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। সে বিষয়ে আগুনে ঘৃত ঢাললেন এবং বাংলাদেশের বড় বড় চোর ব্যবসায়ীদের কলিজায় আগুন ধরিয়ে দিলেন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলার।
কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতিবাজদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করতে পারে। উপরন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার দেশগুলিকে এই সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে, যাতে সেই দেশগুলি এই ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে । মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, তার মিত্র দেশগুলোকেও এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র মিলার এ মন্তব্য করেন। ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক দ্য ডেইলি স্টার, স্টেট ওয়াচ ডটনেট, এসিসিপিআরসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যান্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বিদেশে অর্থ পাচার করে ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ-এর সাম্প্রতিক সফরের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক জানতে চান- মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফর শেষ করেছেন। সফরকালে তিনি সরকারের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। তার সফরকালে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার একটি ‘বোম শেল’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী সাইফুল আলম এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। State Watch.net এবং OCCRP একইভাবে তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অন্যদের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিষয়টি তুলে ধরেছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, তার সঙ্গে বৈঠকে নেফিউ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আমার প্রশ্ন হলো- যুক্তরাষ্ট্র কি দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে?
জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, “যেমনটা আমি আগেই বলেছি অন্য একটি দেশ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে- যে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে আমরা কখনোই বিষয়টি নিয়ে কথা বলি না।” একটি সাধারণ অর্থে, বলা হয় যে নিষেধাজ্ঞাগুলি দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া আমাদের আরও কিছু টুল আছে, যেমন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, আমরা মিত্র দেশগুলোকে এ সম্পর্কে তথ্য দেই, যাতে তারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে বলব দেশ থেকে দুর্নীতিবাজদের নির্মূল করতে। আর তা হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করা।
সোমবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের গ্লোবাল অ্যান্টি-করপশন কো-অর্ডিনেটর রিচার্ড নেফিউ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ১১ জনের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসছে কি না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে রিচার্ড নেফিউ বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা অপক্রমের বিরুদ্ধে আমদের শক্ত একটি হাতিয়ার।
আরও জানতে পড়ুন
ভিসা নীতি নিয়ে আবারো বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র
অন্যদিকে, ম্যাথিউ মিলার আবারো বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলে বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে বলে জানতে চান এই সাংবাদিক। তারা আসলে সেখানে কি করছে সে বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য আছে? বাংলাদেশের অবস্থা আসলে খুবই খারাপ। তা সত্ত্বেও এরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র দাবি করছে। তার প্রশ্নের জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, এটা আমি অনেকবার স্পষ্ট করেছি। আমরা এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বহুবার বলেছি যে আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। এটা আমরা প্রকাশ্যে বলেছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনায় এটি স্পষ্ট করেছি এবং তা অব্যাহত রাখব। আর এটাই আমাদের নীতি।
4 Comments