ইসলামে আদর্শ স্বামীর বৈশিষ্ট্য
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি তাদের স্ত্রীদের কাছে ভালো সেই ব্যক্তিই উত্তম। সুতরাং স্ত্রীদের সাথে বা বউদের সাথে ভালো আচরণ করতে শিখুন। দেখবেন আপনার বউ আপনার প্রতি হৃদয়ের গহিন থেকে ভালোবাসা ঢেলে দিচ্ছে । তাই আজকের আলোচনা ইসলামে আদর্শ স্বামীর বৈশিষ্ট্য।
কারণ স্বামীর গুণের ফলে স্ত্রী হয়ে ওঠে প্রিয় ও প্রিয়। যে গুণটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সীমাহীন ভালোবাসা সৃষ্টি করে। যা একে অপরের এবং আপন শিশুদেরও শান্তির কারণ। আর এটা অনেক ধরনের পাপের রাস্তা বন্ধ করার প্রধান হাতিয়ার।
স্বামীর কিছু গুণাবলীঃ-
- দায়িত্বে সাবধান থাকুন।
স্ত্রীর বাসস্থান, ভরণপোষণ ও স্বামীর উপর অর্পিত অন্যান্য অধিকারের দেখাশোনা করা। একজন দায়িত্বশীল স্বামী তার স্ত্রীর খুব প্রিয়। সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য একজন অনেক পুরস্কারেরও অধিকারী হতে পারেন। আবার দায়িত্বে অবহেলার জন্য হবে বড় শাস্তি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যখন তার পরিবারের জন্য পুণ্যের আশায় ব্যয় করে, তখন তা তার জন্য সদকা হয়ে যায়।’ (বুখারি)
রাসুল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, তিনি তা পালন করেছেন কি, করেননি? এমনকি পুরুষকে তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে ।’ ‘ (ইবনে হিব্বান)
- তার স্ত্রী প্রতি ভাল ধারণা রাখুন।
অনেকে স্ত্রীকে অযথা সন্দেহ করে এবং খারাপ কথা বলে। ফলে তাদের মধ্যে নৈতিক দূষণ ও ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। স্ত্রীরা এমন স্বামীদের অপছন্দও করে। বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান। নিশ্চয়ই কিছু ধারণা পাপ।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)
- ভাল আচরণ করা
ভালো আচরণের মাধ্যমে একজন অন্যকে জয় করতে পারে, তার হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে। এমনকি শত্রুকেও বশ করা যায়।
আল্লাহ বলেন, ‘ভাল ও মন্দ সমান নয়। উত্তরে তাই বলুন, যা চমৎকার। তাহলে দেখবে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সেও হয়ে যাবে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর।’ (সূরা হামীম সাজদা, আয়াত: ৩৪)
তাই আপনার স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিত। অন্যত্র বলা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলেমিশে থাকো।
যদি তুমি তাদের অপছন্দ কর, তাহলে হয়তো তুমি এমন কিছু অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ (সূরা নিসা, আয়াত ১৯)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘কোন মুমিন পুরুষের উচিত কোনো মুমিন নারীর প্রতি ঘৃণা পোষণ না করা। কারণ যদি সে তার একটি অভ্যাসকে অপছন্দ করে তবে সে তার আরেকটি অভ্যাস পছন্দ করবে।’ (মুসলিম)
- স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে খোশগল্প করা।
আপনার স্ত্রীর সাথে একা বসে গল্প করুন। স্ত্রীকে তার পছন্দের সুন্দর নামে ডাকুন। মজার কিছু বলে হাসুন। বৈধভাবে যে কোনো খেলা খেলুন।
- স্ত্রীর জন্য সুন্দর, সুসজ্জিত এবং সুবাসিত থাকুন।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সুবাসিত মানুষ সবাই পছন্দ করে। তারা তাদের স্ত্রীদের কাছেও বেশ প্রিয় হয়ে থাকেন । আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি আমার স্ত্রীর জন্য সুন্দর পোশাক পরিধান করতে পছন্দ করি, যেমন আমি পছন্দ করি যে সে আমার জন্য সুসজ্জিত হোক।
- স্ত্রীর পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।
স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা সম্মানিত হলে স্ত্রী সবার কাছে সম্মানিত ও প্রশংসিত হয়। ফলে স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা বেড়ে যায়। তিনি তার স্বামী এবং তার পরিবারের প্রতি নিবেদিত হন।
- অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করতে শিখুন।
স্ত্রী অসুস্থ হলে স্বামীর কর্তব্য তার যথাসাধ্য সেবা করা। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ‘মুআব্বিজাত’ সূরা পাঠ করতেন এবং তাকে ফুঁক দিতেন। (বুখারি)
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, বদরের যুদ্ধে উসমান (রাঃ) অনুপস্থিত ছিলেন। কারণ তাঁর স্ত্রী, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, তুমি পুরস্কার পাবে এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সমান অংশই পাবে। (বুখারি)
- বাড়িতে স্ত্রীর কাজে সাহায্য করা।
যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের বাড়ির কাজে সাহায্য করে তাদের পছন্দ করা হয়। রাসুল (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদের কাজে সাহায্য করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনি (রাসূল) ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করতেন। এবং নামাযের সময় হলে তিনি নামাযের জন্য রওয়ানা হতেন। (বুখারি)
আরও সংবাদ
চোরাই মার্কেট বা ব্যক্তি থেকে কোনো চোরাই দ্রব্য ক্রয় করলে তা ব্যবহার করা যাবে কি ?
- স্ত্রীর সাথে কাউন্সইলিং করে কাজ করুন।
যে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ বিষয়ে পরামর্শ করে এবং তাকে গুরুত্ব দেয় সে স্ত্রী তাকে পছন্দ করে। আল্লাহ বলেন, “আর জরুরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯)
প্রথম ওহী নাজিলের পর নবী (সাঃ) খাদিজা (রাঃ) এর সাথে পরামর্শ করেছিলেন। (বুখারি)
- স্ত্রীদের কখনই প্রহার না করা।
স্ত্রীর কোনো দোষ থাকলে তাকে ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতে হবে। পরামর্শ দিতে হবে। তাকে সঠিক নিয়ম-কানুন শেখাতে হবে। মারধর করা ভালো স্বামীর স্বভাব নয়। এমনকি মহানবী (সা.)-এর আদর্শও নয়। রাসুল (সাঃ) কখনই তাঁর স্ত্রীদের মারধর করেননি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) নিজ হাতে কোনো কিছুকে প্রহার করেননি। না তাঁর কোনো স্ত্রীকে, না কোনো খাদেমকে।’ ‘ (মুসলিম)। যারা (স্ত্রীদের)প্রহার করে তাদের সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেছেন, তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়। (আবু দাউদ)
ঝগড়া লেগে, প্রহার করে বা মারধর করে নয়; ভালোবাসা আদর-স্নেহ,যত্ন দিয়ে স্ত্রীদেরকে কাছে টানার চেষ্টা করুন। আপনিও ভালো থাকবেন, পরিবারও ভালো থাকবে । আল্লাহ খুশি থাকবে ।
3 Comments