ইসলামে হালাল উপার্জন
বৈধ ও হালাল উপার্জনের উপর নির্ভর করা এবং অবৈধ ও হারাম উপার্জনকে প্রত্যাখ্যান করা একজন মুসলমানের জন্য ফরজ ।শুধু তাই নয়, এর ওপর নির্ভর করে তার অন্যান্য ফরজ ও নফল ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হওয়া বা না হওয়া। বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় অনেক মুসলমান এ নিয়ে গভীর বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। অনেক পরহেজগার লোক আছে যারা সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদি সম্পর্কে খুব সচেতন কিন্তু হারাম উপার্জন সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নয়। কোরআন ও হাদিসের মতে তা তাকওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ বলেন, হে রসূলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু আহার কর এবং সৎকাজ কর। তুমি যা কর আমি সে সম্পর্কে অবগত আছি।’
মুসলমানদের জন্য হালাল উপার্জন হল-
১. বৈধ উপায়ে হালাল ব্যবসা করা।
২. শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন।
৩. চাকুরির মাধ্যমে উপার্জন।
অবৈধ উপার্জন থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং অন্যায়ভাবে ভোগের জন্য বিচারকদের কাছে জেনেশুনে লোকের সম্পদ পেশ করো না। সূরা আন-নিসার ২৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘ও মুমিনরা, নিজেদের মধ্যে অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না; তবে পারস্পরিক চুক্তিতে ব্যবসা করা তোমাদের জন্য বৈধ।
কুরআন ও হাদীসে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ অবৈধ লেনদেন হল, যেমন; ওজন বা পরিমাপ কম দেওয়া, ভেজাল করা, প্রতারণা করা, ফাঁকি দেওয়া, সরকার বা জনগণের সম্পদ হরণ করা, সুদ নেওয়া বা দেওয়া, ঘুষ গ্রহণ করা বা দেওয়া ইত্যাদি। , ‘যারা কম পরিমাপ করে তাদের জন্য তেল হল জাহান্নামের ভয়াবহ পরিণতি, এইভাবে কোরান বারবার পূর্ণ ওজন, পরিমাপ ও পরিমাপ করার নির্দেশ দেয় এবং সব ধরনের ফাঁকি, কম বেতন বা কম অর্থ প্রদানের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। এটা করলে দুনিয়াতে কঠিন শাস্তি এবং আখেরাতে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “যখন কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা মাপে-ওজনে বা পরিমাপে কম বা ভেজাল দিতে থাকে, তখন তারা দুর্ভিক্ষ, জীবনের কষ্ট এবং প্রশাসন বা ক্ষমতাবানদের নিপীড়নের শিকার হয়।”
আরও সংবাদ
আল কুরআনের আলোঃ কাউকে বিকৃত নামে ডাকা পাপ
ইসরাইলের বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতায় ‘বিরক্ত’যুক্তরাষ্ট্র
যে কোন প্রকার প্রতারণা হারাম । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে বা প্রতারণা করে তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।”
আল্লাহ বলেন, ‘কোনো নবির পক্ষে অসম্ভব যে তিনি অবৈধভাবে কিছু গোপন করে গ্রাস করবেন এবং কেউ অবৈধভাবে কিছু গোপন করে তাহলে কেয়ামতের দিন সে তা নিয়ে আসবে। অতঃপর প্রত্যেককে যা সে অর্জন করেছে তা পূর্ণ মাত্রায় দেওয়া হবে। তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’
ঘুষ অবৈধ উপার্জনের অন্যতম উপায়। ঘুষ হল কোনো কাজ, সম্মান বা ভাতা করার জন্য ‘প্রাপক’, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো ধরনের উপহার, গ্রাচুইটি বা বিবেচনা করা।
এ ছাড়া নেতা, কর্মকর্তা, কর্মচারী, বিচারক ইত্যাদিকে তাদের অনুগ্রহ আকৃষ্ট করার জন্য প্রদত্ত উপহারকেও হাদিস শরিফে ঘুষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘুষদাতা ও ঘুষদাতাকে অভিশাপ দিয়েছেন।
অবৈধভাবে উপার্জন করা এবং অবৈধভাবে ব্যয় করা উভয়ই পাপ কাজ। এ হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানব সন্তানদের পা এক কদমও নড়বে না যতক্ষণ না কিয়ামতের দিন তাদের পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।
তারা হল-
সেগুলো হলো-
১. সে নিজের জীবন কোন্ পথে পরিচালিত করেছে?
২. যৌবনের শক্তি সামর্থ্য কী কাজে লাগিয়েছে?
৩. অর্থ-সম্পদ কোন্ পথে উপার্জন করেছে?
৪. অর্থ-সম্পদ কোন্ পথে খরচ করেছে?
৫. যতোটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সে অনুযায়ী কতোটুকু চলেছে? –তিরমিজি।
তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত সম্পদ উপার্জন ও ব্যয়ে সতর্ক হওয়া। প্রত্যেককে হালাল পথ অনুসরণ করতে হবে এবং উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে হারাম পথ পরিত্যাগ করতে হবে।
অবৈধ উপার্জনের একটি হল রিবা বা সুদ। ইসলামী শরীয়তে সুদ হচ্ছে ঋণ হিসেবে দেওয়া টাকার উপরে সময়ের বিনিময়ে টাকা নেওয়া। এ ছাড়া একই জাতীয় পণ্যের লেনদেনে কম-বেশি করাও ইসলামে সুদ বলে গণ্য। কুরআন ও হাদীসে সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সূরা বাকারার ২৭৫-২৭৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা সুদ গ্রহণ করে তারা হবে তাদের মত যাদেরকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দেয়। তার কারণ, ‘তারা বলে, ব্যবসা সুদের মতো।’ কিন্তু আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।”
মহান আল্লাহ আমাদের হারাম উপার্জন থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন!