মাহে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে মহানবী (সা.) এর ভাষণ
লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র,সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ সর্বশেষ এবং সর্বশেষ্ঠ নবীর উপর তার প্রিয় উম্মতের পথপ্রদর্শনের জন্য অবতীর্ণ করেন। আর সে রাত্রি যেহেতু রমজান মাসের কোন একটি রাত্রি সেকারণে পুরো রমজান মাসের মর্যাদাই অন্যান্য আরবি ১১ মাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি বেড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব ও শাবান মাসের বরকত কামনা করে রমজান পর্যন্ত পৌঁছার আকাঙ্ক্ষায় বেশি বেশি দুআও করতেন । রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন ভাষণটি ছিল এরূপ
বিজ্ঞ সাহাবী হজরত সালমান ফারেসি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার শাবান মাসের শেষ দিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করলেন। রসুল (সা.) বললেন, হে লোকসকল! তোমাদের ওপর এক মহান ও কল্যাণময় মাস ছায়া বিস্তার করছে। এটা এমন মাস যাতে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহতায়ালা (তোমাদের জন্য) এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং রাতে (তারাবি) নামাজ পড়াকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার আশায় একটি নেক কাজ করবে সে ওই ব্যক্তির সমান হবে, যে অন্য মাসে ৭০টি নেক কাজ আদায় করেছে। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্য এমন একটি গুণ যার প্রতিদান (সওয়াব) হলো জান্নাত।
এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা ওই মাস যাতে মুমিন ব্যক্তির রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়, এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে এটা তার পক্ষে তার গুনাহসমূহের জন্য ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব দান করা হবে এতে তার সওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ!! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি এমন সামর্থ্য রাখে না যা দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে। তখন রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা এ সওয়াব ওই ব্যক্তিকেও দান করেন যে কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ দ্বারা, একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করায়। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করায় আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউস (কাউসার) থেকে পানীয় পান করাবেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন একটি মাস যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্যম অংশ ক্ষমা আর শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি। যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীনস্থদের কর্মভার হালকা করে দেবে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করবেন। (বায়হাকি, মিশকাতুল মাসাবিহ)
তাই প্রত্যেক রোজাদার মুমিনের একান্ত কর্তব্য মাহে রমজানে রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্বীয় অর্থসম্পদ দু:স্থ মানবতার সেবায় ব্যয় করা, গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহরি ইফতারসহ সকল ক্ষেত্রে শরীক করে সহানুভূতি প্রদর্শন করা, তা হলেই রমজানের সিয়াম সাধনা সার্থক হবে। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের রমজান মাসে পরিপূর্ণ আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।