বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুন লেখক প্রিয়াঙ্কা তসলিমের প্রথম উপন্যাস “দ্যা লাভ ম্যাচ” এখন আমেরিকান পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
বিশ্বখ্যাত প্রকাশক সাইমন অ্যান্ড শুস্টার, যা বিশ্বের “বড় পাঁচটি” প্রকাশনা সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। তারা বাংলাদেশি আমেরিকান শিক্ষক এবং লেখক প্রিয়াঙ্কা তসলিমের প্রথম উপন্যাস, “দ্য লাভ ম্যাচ” গত ৩রা জানুয়ারী, ২০২৩-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় প্রকাশ করেছে। প্রকাশনার আগে থেকেই এই উপন্যাসটি ছিল বহু কাঙ্ক্ষিত । ২০২৩ সালের বহুল প্রত্যাশিত বইয়ের তালিকায় স্থান করেছিল “দ্যা লাভ ম্যাচ”। উপন্যাসটি ফিচার করেছে “টিন ভগ”, “পপসুগার” এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রেস। একাধিক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড রিভিউয়ার থেকে পেয়েছে তারকাচিহ্নত রিভিউ, নির্বাচিত হয়েছে মর্যাদাপূর্ণ জুনিয়র লাইব্রেরি গিল্ড গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড-এ। বর্তমানে জানুয়ারি মাসের অ্যামাজন এডিটর’স পিক এ বেস্ট ইয়াং এডাল্ট নভেল হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে।
এই উপন্যাসটি প্রকাশে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির প্রকাশনা সংস্থাগুলো। তাই এটি একটি নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমান প্রকাশক সাইমন অ্যান্ড শুস্টার অর্জন করে। একাধিক আগ্রহী প্রকাশনা সংস্থার প্রবল আগ্রহের মধ্যে লক্ষাধিক ডলারে, ছয় অঙ্কের নিলামে প্রকাশক প্রিয়াঙ্কা তসলিমের উপন্যাসটির সত্ত্ব গ্রহন করেন। এটি কোন বাংলাদেশী প্রধান চরিত্র নিয়ে এবং বাংলাদেশী সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে প্রথম সারির ইংরেজি প্রকাশকের প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস গুলির মধ্যে একটি। যা বাংলাদেশী সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের একটি নতুন দরজা খুলে দিল। এটি এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল যা বাংলাদেশী তরুন প্রজন্ম ও সম্ভাবনাময় তরুন লেখকদের করবে অনুপ্রাণিত।
আগামী ২রা মার্চ ২০২৩ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে সারা পৃথিবীজুড়ে বইটির ইংরেজি সংস্করণও প্রকাশ করবে সাইমন অ্যান্ড শুস্টার ইউ.কে। যুক্তরাষ্ট্রে বইটি বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতা থেকে পাওয়া যাচ্ছে, যেমন বার্নস অ্যান্ড নোবেল, টার্গেট, অ্যামাজন, এবং ওয়ালমার্ট। আমেরিকা ও কানাডা জুড়ে স্থানীয় বইয়ের দোকানেও পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত এই উপন্যাস টি।
“দ্য লাভ ম্যাচ” হল একটি তারুন্যের গল্প যা ১২ থেকে ১৮ বা তার বেশি বয়সের পাঠকদের জন্য লেখা। উপন্যাস টি আবর্তিত হয়েছে একটি বাংলাদেশী প্রধান চরিত্র এবং আমেরিকান বাংলাদেশী সংস্কৃতির আবহে। কাহিনী গতি পেয়েছে প্যাটারসন – নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী প্রবাসী কমিউনিটির দৈনন্দিন যাপিত জীবনের টানাপড়েনে। অষ্টাদশী জাহরা খান এই গল্পের নায়িকা, যে প্রথম প্রজন্মের আমেরিকান অভিবাসী, যার শেকড় ও সংস্কৃতি জুড়ে আছে বাংলাদেশ। ত্রিভুজ প্রেমের এই গল্প রচিত হয়েছে জাহারা ও তার মায়ের আবেগঘন সম্পর্ক অনুসরণ করে। বাবার মৃত্যুর পর, সিলেটি বাংলাদেশী প্রবাসী সমাজে টিকেথাকা, জীবন সংগ্রাম ও তাদের একান্ত পথচলা এই গল্পের উপজীব্য। গ্রীষ্মকালে জাহরার কলেজে পড়া উচিত, কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে, তাকে পুরো সময় কাজ করতে হয়। জাহারার শান্ত গ্রীষ্ম একটি অপ্রত্যাশিত মোড় নেয় যখন তার মা একটি স্থানীয় বাংলাদেশী পরিবারে জাহরাকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অনেক ধুমধাম করে মুক্তি পায় “দ্যা লাভ ম্যাচ” যা ইতিমধ্যেই দারুন প্রশংসা কুড়িয়েছে ও পেয়েছে তুমুল পাঠক প্রিয়তা! নভেম্বর ১৮ তারিখ ক্যালিফরনিয়ার ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার্স অফ ইংলিশ – এ আলোচনা, ২রা এবং ৩শে জানুয়ারী ভার্চুয়াল ইভেন্ট করার পর, প্রিয়াঙ্কা ৪ই জানুয়ারী পেনসিলভানিয়ার বেনসালেমের নেশামিনি মল বার্নস অ্যান্ড নোবেলে একটি ইভেন্ট করেছিলেন এবং তারপরে ৬ই জানুয়ারী ম্যানহাটনের বুকস অফ ওয়ান্ডারে লেখক অ্যানের সাথে আরেকটি লাইভ ইভেন্ট করেছিলেন। ১২ জানুয়ারি মনটিক্ল্যায়ার পাবলিক লাইব্রেরী, ৩রা মার্চ নর্থ টেক্সাস টিন বুক ফেস্টিভাল এ উপন্যাসের ব্যাপারে সরাসরি আলোচনা করবেন ও পাঠকদের প্রশ্নউত্তর এর জবাব দিবেন। বইটির হার্ডকভারের দাম সাধারণত $19.99 কিন্তু বর্তমানে সীমিত সময়ের জন্য Target.com এবং Amazon.com উভয়েই বিক্রি হচ্ছে বিশেষ ডিস্কাউন্টে৷
প্রিয়াঙ্কার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা নিউ জার্সির প্যাটারসনে এবং বর্তমানে কাছাকাছি থাকেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক। তিনি কিশোর বয়স থেকেই পড়তে পছন্দ করেন এবং তার বাবা-মা তাকে ঘুমানোর সময় গল্প বলতেন বা পরে শোনাতেন। তিনি হাইস্কুল থেকেই লেখার হাতেখড়ি নিয়েছেন তার চারপাশে ঘটে যাওয়া মুহূর্ত নিয়ে কিন্তু কলেজ পর্যন্ত বাংলাদেশী চরিত্রগুলি লেখেননি কারণ তিনি ভেবেছিলেন আমেরিকান দর্শকরা তাদের প্রতি আগ্রহী নাও হতে পারে। প্যাটারসনে তার পরিবারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
তার বাবা সেলিম চৌধুরী বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের শাহবন্দর পতন জমিদার বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তার মা হুসনেআরা আহমেদ সিলেটের তাজপুরের চান্দাইর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মাতৃভূমি থেকে হাজার মাইল দূরে বিশ্ব মানচিত্র আরও একবার নতুন করে চিনিয়ে দিতে পেরে তারা গর্বিত প্রিয়াঙ্কা তসলিমের বিশ্বজয়ী অর্জনে!