মুসলিম নারীদের ‘বিক্রি’করে দেয়া সেই অপরাধী অমকেশ্বরের বিচার শুরু হয়েছে
ভারতের শতাধিক মুসলিম নারীকে গতবছর অনলাইনে ‘বিক্রি’ করে দেয়ার জন্য একটি অ্যাপ সৃষ্টি করে তাতে নারীদের ছবি যুক্ত করার দায়ে অভিযুক্ত এক যুবকের বিচার শুরু হচ্ছে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট-গভর্নর ভিকে সাক্সেনা ওই যুবকের বিরুদ্ধে বিচারের অনুমতি দেয়ার পর পুলিশ এ ঘোষণা দিয়েছে। তার নাম অমকেশ্বর ঠাকুর (২৫) ।
অমকেশ্বর ঠাকুর সহ আরও কয়েকজন মিলে একটি উন্মুক্ত অ্যাপ চালু করে। এর নাম দেয়া হয় ‘সুলি ডিলস’। এই শব্দ বাংলায় এটা নারীদেরকে অবমাননা করতে ব্যবহার করা হয়। ২০২১ সালের জুলাইয়ে গিটহাব ওয়েব প্লাটফরমে তারা এই অ্যাপ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনা হয় অনেক ছবি। বিশেষ করে মুসলিম নারীদের প্রোফাইল সৃষ্টি করা হয়। তাদেরকে বর্ণনা করা হয় ‘ডিলস অব দ্য ডে’ হিসেবে।
এমন অফার দিয়ে এসব নারীকে বিক্রি করার কথা বলা হয়। অমকেশ্বর ঠাকুর, নিরাজ বিষ্ণুই (২০) মিলে সৃষ্টি করে ‘বুলি বাঈ’ নামে আরেকটি অ্যাপ। এতে আপলোড করে শতাধিক মুসলিম নারীর ছবি। তারপর তা প্রকাশ করে গিটহাবে। এ অভিযোগে ভারতের মুসলিম নারীরা সোচ্চার হন। তারা আন্দোলনে নামেন। এভাবে মুসলিম নারীদের অবমাননা ও হেয় করার অভিযোগে অমকেশ্বরের সঙ্গে নিরাজ বিষ্ণুইকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই দুই অপরাধীর মধ্যে অমকেশ্বর ঠাকুর কম্পিউটারের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের ওপর ডিগ্রিধারী। তাকে দিল্লি পুলিশ মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর সিটি থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ভারতীয় দণ্ডবিধি, তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং ভারতের ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারার অধীনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ অপরাধ সংঘটিত করলে তার অপরাধকে এই ধারায় ফেলা হয়। এই ধারাটি সাধারণত সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
সমালোচক সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, আর্টিস্ট এবং গবেষকরা বলছেন ভারতে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এবং তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সময়ে হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে বলে ওইসব মুসলিম নারী সমালোচনা করেছেন। তবে সরকার ও বিজেপি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। সমালোচকরা বলছেন, ভারতের রাজনীতি মেরুকরণ হয়েছে কয়েক বছরে। এ সময়ে সেখানে মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে ট্রল করা বা বিদ্রুপ করা বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে।
ভারতে অনলাইনে হয়রানি নিয়ে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, কোনো নারী যত বেশি মুখরা হবেন, তাকে তত বেশি টার্গেট করা হয়েছে। এর মাত্রা অনেক বেশি ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীদের ক্ষেত্রে এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে।
সুলি ডিলস এবং বুলি বাঈ এই দুটি অ্যাপসে যেসব নারীদের ছবি বা প্রোফাইল পোস্ট করা হয়েছিল তারা সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের। তারা
ওদিকে মার্চে অমকেশ্বর ঠাকুরকে জামিনে মুক্তি দেয় আদালত। তখন আদালত থেকে বলা হয়, সে বিমানে করে উড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে নেই। এমনকি তদন্তকে প্রভাবিত করার মতো অবস্থায়ও নেই।