ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ আবরার ফাহাদের স্মরণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগের আগ্রাসী অবস্থানের মুখে পণ্ড হয়ে যায় পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশটি।
হামলায় আহত ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এলে সেখানেও হামলার করা হয়।
বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম. এম মহিন উদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, সাংগঠনিক নাজিম উদ্দীন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আল আমিন রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক শিমুল খান, আব্দুর রাহিম, জুহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনসহ কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
হামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মসূচির জন্য আনা চেয়ার ও মাইক্রোফোন ভাঙচুর করা হয়। ব্যানারসহ কর্মসূচির কিছু জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। ছাত্র অধিকারকর্মীরা বাধা দিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। সমাবেশে যোগদানকারী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখার সাহিত্য সম্পাদক জাহিদ আহসান। ঘটনার সময় পাটকেলের আঘাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন আহত হন।
ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, তারা (ছাত্র অধিকার) ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও মৌলবাদীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করে। আমরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কি না জানতে চাই। এসময় তারা কিছু না দেখিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করে।
তবে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী স্মরণসভা শুরু করার পরপরই প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে, দুজনের অবস্থা গুরুতর। একজন রিকশা চালকেরও মাথা ফেটে গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা কোনো দলীয় ব্যানারে এই কর্মসূচি করিনি, আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে এই কর্মসূচি করেছি। আমরা এই ঘৃণ্য হামলার নিন্দা জানাই।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খানের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী হামলা চালায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রথমে এসে জানতে চান যারা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তারা সবাই ঢাবির শিক্ষার্থী কি না। আলোচনার একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে তারা অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্মরণসভায় আনা অর্ধশতাধিক চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানার পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে আহতরা চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানেও হামলার ঘটনা ঘটে। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের এক নেতা। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছাত্র ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতারা তাদের ওপর কয়েক দফা হামলা চালায়।
এ ছাড়া পুলিশ ছাত্র অধিকারের প্রায় ১০ জনকে আটক করে গাড়িতে নিয়ে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানেও তাদের মারধর করে।