ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম বিদ্বেষের জঘন্য উদাহরণ
দাড়ি-টুপি থাকলেই সন্ত্রাসী বলে তকমা দিচ্ছে ভারত সরকার

কাশ্মীর সীমান্তে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এরই মধ্যে আরেকটি যুদ্ধও চলছে - তথ্যের যুদ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যমূলক খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এর একটি দুঃখজনক উদাহরণ হলেন কাশ্মীরের পুঞ্চ শহরের বাসিন্দা এবং একজন সম্মানিত মাদ্রাসা শিক্ষক মোহাম্মদ ইকবাল। ৭ মে সকালে সীমান্ত এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ ইকবাল শহীদ হন। তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পুঞ্চের জিয়া-উল-উলূম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন যে, তাকে হত্যার আগে ভারতীয় বাহিনী সারা রাত ধরে পাকিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। ফলস্বরূপ, পরের দিন সীমান্তে বন্দুকযুদ্ধে ইকবাল নিহত হন।
তবে, ইকবালের মৃত্যুর পর, যখন পরিবার শোক প্রকাশ এবং তাকে দাফন করতে ব্যস্ত ছিল, তখন কিছু ভারতীয় টিভি চ্যানেল তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বিভ্রান্তিকর প্রচার শুরু করে। ভাই ফারুক আহমেদ বলেন, "আমার ভাই একজন নির্দোষ শিক্ষক ছিলেন। তার দাড়ি এবং টুপি দেখে তারা তাকে সন্ত্রাসী বলে ডাকত।" আমরা তাকে হারিয়েছি, মিডিয়া তাকে অপমান করেছে—এটা আমাদের ক্ষতে নুন ছিটিয়ে দেওয়ার মতো।
নিউজ১৮, জি নিউজ, এবিপি, এর মতো ভারতের কতিপয় শীর্ষস্থানীয় চ্যানেল দাবি করেছে যে, ইকবাল ‘পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ভারতীয় অভিযানে নিহত হয়েছেন।’ এমনকি তারা তার ছবি ব্যবহার করে দাবি করেছে যে তিনি পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।
আরও পড়ুন-
মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ৩৫০ ধর্মীয় স্থাপনা ভেঙ্গে দিলো ভারত
শীর্ষ ১০ টি ঘৃণ্য দেশের তালিকায় ভারত
ভারতে চলছে ভয়ংকরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন: জাতিসংঘ
পরিবারটি তখনও মিডিয়ায় প্রচারণা সম্পর্কে অবগত ছিল না। হঠাৎ, একজন আত্মীয় হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও পাঠায়, যেখানে দেখা যায়—একটি চ্যানেল দাবি করছে যে, ভারতীয় সৈন্যরা একজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে, এবং ইকবালের ছবি স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে।
এই প্রচারণায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইকবালের ভাই বলেন, “আমরা কাশ্মীরে থাকি, আমাদের পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুঞ্চে বাস করে আসছে। তারা কীভাবে বলতে পারে যে, আমার ভাই পাকিস্তানে থাকতেন?”
এই গুজব ভারতীয় মিডিয়ায় এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে পরের দিন—৮ মে—পুঞ্চ জেলা পুলিশ স্পষ্ট বিবৃতি জারি করতে বাধ্য হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে মাওলানা মোহাম্মদ ইকবাল সীমান্তবর্তী গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন। তিনি একজন সম্মানিত ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন এবং কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। পুঞ্চ পুলিশ এই মিথ্যা প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এই ঘটনাটি কেবল একটি পরিবারের ক্ষোভ এবং অপমানের প্রকাশ নয় - এটি ভারতীয় মিডিয়ার দায়িত্বহীনতা আর মিথ্যাচারের একটি নগ্ন উদাহরণ। নিউজলন্ড্রির সম্পাদক মনীষা পান্ডে বলেছেন যে মিডিয়া রেটিং পাওয়ার দৌড়ে যাচাই না করেই সংবাদ প্রচার করছে - যা খুবই বিপজ্জনক। একজন নিরীহ নাগরিক, বিশেষ করে একজন মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে এই ধরনের মিথ্যা প্রচার মানবতার চরম অপমান।
তবে, বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল এই ভুলের জন্য ক্ষমা চায়নি। শুধুমাত্র নিউজ১৮ পরিবার ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। অন্য কেউ কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি জটিল, সামরিক সংঘর্ষ চলছে - কিন্তু একই সাথে, যদি তথ্য যুদ্ধে নিরীহ মানুষ ক্রমাগত অপমানিত হয়, তবে এটি কেবল সাংবাদিকতার ব্যর্থতা নয়, বরং এক ধরণের নীরব সহিংসতাও।
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল ‘বার্সেলোনা’

নাইজেরিয়ায় আকস্মিক বন্যায় ১৫০ প্রাণহানি, নিখোঁজ অনেক,সর্বত্র ধ্বংসচিত্র

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সরাসরি গুলি / গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েও ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১০

স্ত্রীর হাতে মার খেলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো! কি ঘটেছিল সেদিন?

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত ‘হামাস’
