বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণ্য দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তালিকায় রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, রাশিয়া এবং কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজউইক ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের গবেষণার ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

২০২৫ এর বিচারে এই ঘৃণ্য তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই

নিউজউইকের উদ্ধৃতি দিয়ে, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং জনমত জরিপের মিশ্রণ থেকে এই র‌্যাঙ্কিং তৈরি করা হয়েছে। এটি বিভিন্ন সরকারের প্রতি বিশ্বের জনগণের হতাশা এবং ক্ষোভের প্রতিফলনের  বহিঃপ্রকাশ । তালিকার সবচেয়ে ঘৃণ্য দেশগুলির মধ্যে ভারত দশম স্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন সহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নিউজউইক ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের গবেষণার উপর ভিত্তি করে একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে। মানচিত্রে বিশ্বের দশটি ঘৃণ্য দেশের তালিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং জনমত জরিপের সংমিশ্রণে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যা সরকার, নীতি এবং বিশ্বব্যাপী আচরণের প্রতি ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রতিফলিত করে।

চীন: তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন। দেশটি তার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, সস্তা পোশাক, ব্যাপক সেন্সরশিপ এবং পরিবেশ দূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সমালোচিত। হংকং, তাইওয়ান এবং ম্যাকাওয়ের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি এবং উইঘুর মুসলিমদের প্রতি তার আচরণের জন্যও বিশ্বব্যাপী তীব্র অসন্তোষ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যদিও এটি অনেক আমেরিকানের কাছে অবাক করার মতো মনে হতে পারে, তবে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের কাছে এটি অবাক করার মতো নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর হস্তক্ষেপ, নিজস্ব স্বার্থ চাপিয়ে দেওয়া, বন্দুক সংস্কৃতি, ফাস্ট ফুডের প্রতি তার অত্যধিক ঝোঁক এবং কিছুটা অহংকারী মানসিকতা  যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।

রাশিয়া: ইউক্রেনের সাথে চলমান যুদ্ধ এবং এর কঠোর গণতন্ত্রবিরোধী নীতি রাশিয়াকে এই তালিকায় স্থান দিয়েছে। দেশটির আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্রনীতি এবং নাগরিক অধিকার বঞ্চিত করার ফলে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

উত্তর কোরিয়া: অত্যন্ত কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, কঠোর শাস্তি এবং সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সামরিক মানসিকতার কারণে উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভয় এবং ক্ষোভ রয়েছে।

ইসরায়েল: ফিলিস্তিনের উপর দীর্ঘস্থায়ী আক্রমণ এবং সামরিক অভিযানের জন্য ইসরায়েল নিয়মিতভাবে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখোমুখি হয়। এটি অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে বিতর্কিত।

পাকিস্তান: ধর্মীয় উগ্রবাদ, অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা এবং ভারতের সাথে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক পাকিস্তানকে এই তালিকায় স্থান দিয়েছে।

ইরান: পশ্চিমা দেশগুলির সাথে উত্তেজনা, নাগরিক স্বাধীনতার উপর দমন-পীড়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন 'প্রক্সি' যুদ্ধে জড়িত থাকার কারণে ইরানের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি নেতিবাচক।

ইরাক: যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন সত্ত্বেও, সহিংসতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংঘাতের কারণে ইরাক এখনও আন্তর্জাতিকভাবে একটি অস্বস্তিকর নাম।

সিরিয়া: দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ, সরকারি দমন-পীড়ন এবং ভয়াবহ মানবিক সংকটের কারণে সিরিয়া সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই নেতিবাচক।

ভারত: সম্প্রতি ধংসকরণ , ধর্মীয় উত্তেজনা, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ এবং তার সাথে থাকা সকল দেশের সীমান্ত বিরোধ - এই সবকিছুই ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তির উপর কালো ছায়া ফেলেছে।

পরিশেষে বলা যায়, এই র‍্যাঙ্কিং কেবল সরকারি নীতির প্রতিফলন নয়; এটি দেখায় যে একটি দেশের আচরণ, মূল্যবোধ এবং সংকট মোকাবেলা কীভাবে তার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি গঠন করে। বিশ্বজুড়ে শান্তি আলোচনা চলমান থাকাকালীন, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব মানুষকে আরও সমালোচনামূলক করে তুলছে।

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ বলছে যে, কাউকে ঘৃণা করা সাধারণত কোনও একক কারণে হয় না। একটি দেশের সামরিক কার্যকলাপ থেকে শুরু করে তার সংস্কৃতি এমনকি বিদেশে পর্যটকদের আচরণ, সেই দেশের ভাবমূর্তি সেই দেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিশ্ব যত বেশি সংযুক্ত হচ্ছে, পারস্পরিক বিচারও তত বাড়ছে।