আঘাত না করে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ, রাষ্ট্রপতি পদক পেলেন সেই পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন
আঘাত না করে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ, রাষ্ট্রপতি পদক পেলেন সেই পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন

অস্ত্র, লাঠি আর ক্ষমতার জোরে মানুষকে ক্ষণিকের জন্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিন্তু মানুষের মন জয় করা যায়না। কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন এটাই প্রমাণ করেছেন। আর সেই প্রমাণের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক, “রাষ্ট্রপতি পদক”। এই উদ্ভাবনী মানবিকতা; আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাধরদের জন্য বড় মাপের শিক্ষা এবং পাথেয়।
লাঠিচার্জ না করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে আলোচনায় আসা পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ হোসেনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) প্রদান করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৭ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। তবে, রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, ২০২৫ সালে, নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তার উদ্ভাবনী এবং বুদ্ধিমান পুলিশিং কৌশলের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ সদস্য রিয়াদ হোসেনকে 'রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)' প্রদান করা হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে।
অতীতে, পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশ পুলিশ পদক-বিপিএম এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক-পিপিএম পদক দেওয়া হত। এবার, রিয়াদের ক্ষেত্রে এটি ভিন্নভাবে দেওয়া হয়।
সচিবালয়ের সামনে উত্তেজনার ঢেউ ছিল। ১৪ ফেব্রুয়ারির সেই বিকেলে, আন্দোলনের স্লোগান বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছিল, শহরের কোলাহলকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন তার কর্তব্যবোধ ধরে দাঁড়িয়েছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা রাস্তা দখল করে নিয়েছে। চাপ বাড়ছে। সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ। উত্তেজনা যেকোনো মুহূর্তে সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। কিন্তু রিয়াদ বন্দুক তোলেনি, কারো দিকে লাঠিও চালায়নি। তার হাতে লাঠি ছিল, কিন্তু সে সেই লাঠি দিয়ে বাতাসে আঘাত করেছিল—রাস্তায়, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। যেন সে বলছিল—তুমি চলে যাও, আমার একটা দায়িত্ব আছে, কিন্তু তোমার প্রতি আমারও শ্রদ্ধা আছে।
এই শ্রদ্ধা ও মানবিক কৌশলের এক ঝলক ঘটনার ভিডিওতে ধরা পড়েছে, যা অল্প সময়ের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষ ভিডিওটি শেয়ার করে বলেছেন—আমাদের সমাজে এই ধরণের পুলিশ প্রয়োজন! একজন পুলিশ সদস্যের এমন সংযত, সংবেদনশীল আচরণে সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, বিশ্লেষক—সবাই অভিভূত।
এমন উদ্ভাবনী কৌশল এবং দায়িত্বের স্বীকৃতি একটু দেরিতে হলেও তা গৌরবের সাথে এসেছে। রিয়াদ হোসেন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। এই বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালে, পদকের তালিকায় তার নাম এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
২৭শে মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, "নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার উদ্ভাবনী এবং বুদ্ধিমান পুলিশিং কৌশলের স্বীকৃতিস্বরূপ, পুলিশ সদস্য রিয়াদ হোসেনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) প্রদান করা হয়েছে।"
এটি কেবল রিয়াদের জন্য নয়, এটি সমগ্র পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি বার্তা। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সহিংসতা নয়, সংবেদনশীলতা সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। এবং রিয়াদ এই বার্তার একটি জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছেন।
এই পদকের মাধ্যমে, রিয়াদ এককালীন ৭৫,০০০ টাকা এবং মাসিক ১,৫০০ টাকা ভাতা পাবেন। সংখ্যাটি বড় নাও হতে পারে, তবে এর মূল্য আত্মসম্মান ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি রিয়াদের মতো হাজার হাজার পুলিশকে শেখাবে—ক্ষমতা নয়, বরং মানবতাই মানুষের হৃদয় জয় করে।
সে রাস্তায় পুলিশ সদস্যকে আঘাত করেছিল, কিন্তু কারও উপর নয়—একটি খুঁটিতে। মনে হচ্ছিল যেন সে বলছিল—আমি শৃঙ্খলা চাই, কিন্তু রক্তপাত চাই না। এই এক মুহূর্তের ঘটনাই একজন পুলিশ কনস্টেবল নীরব নায়কে পরিণত করে দিলো।
বাংলাদেশ এর আরো খবর

গণহত্যাকারী সাবেক আইন মন্ত্রী ফ্যাসিস্ট আনিসুল হককে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি

সরকারের সম্প্রসারিত কাজের সুফল পেতে শুরু করেছে সিলেটবাসী / ৬০ টন তৈরি পোশাক নিয়ে সিলেট থেকে প্রথম কার্গো ফ্লাইট গেল স্পেনে

পোপের শেষকৃত্যে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময়

শিল্প বিকশিতকরণ এবং উন্নয়নের নতুন ধাপে বাংলাদেশ / দ্রুতই দেশে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন হচ্ছে
