- This event has passed.
বহু মৌসুমি কসাই আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে
June 17 @ 8:00 am - 5:00 pm
বহু মৌসুমি কসাই আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন ১০৫ জন ‘মৌসুমী কসাই’।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় মৌসুমী কসাইসহ ১০৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জানা গেছে, সোমবার (১৭ জুন) দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১১৫ জন রোগী এসেছেন। তাদের কারও হাত, কারও পা কেটেছে।
কারও কারও হাত-পা ভেঙে গেছে গরু। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য ডিএম-এ আসা ১১৫ জনের মধ্যে ১০৫ জনই মৌসুমী কসাই।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সবুজ হোসেন (৩৫) চিকিৎসার জন্য ডিএম-এ এসে বলেন, ‘গরু জবাই প্রায় শেষ। হাড়ে রাগ দিয়েছি।হঠাৎ আমার হাত থেকে ছিটকে পড়ে আমার পায়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: আরিফ হোসেন বলেন, সকাল থেকে ঢামেক জরুরি বিভাগে যারা এসেছেন তাদের বেশির ভাগই কোরবানির পশু কাঁটতে করতে গিয়ে আহত হয়েছেন। আমার ধারণা, সন্ধ্যা পর্যন্ত গরু কাঁটতে করতে গিয়ে জখম হয়ে জরুরী বিভাগে ২০০ থেকে ২৫০ মৌসুমী কসাই আসে
মৌসুমী কসাইগন গরু ভেদে ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন শুধু একটি গরু বানাইদিতেই।
রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে মৌসুমি কসাইদের ভিড়। ঢাকার অলি-গলিতে বড় বাজার ও ব্যস্ত এলাকায় কসাইদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এসব কসাইদের একটা বড় অংশ এসেছে ঢাকার বাইরের জেলা থেকে। বাড়তি আয় ও মাংসের আশায় ঈদের আগের দিন রাজধানীতে জবাইয়ের কাজ পেতে ছুটে আসেন তারা।
মৌসুমী কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের অন্য দিনগুলোতে তারা এ পেশায় থাকে না। তারপর তাদের কেউ কেউ রিকশা চালায়, শাকসবজি বিক্রি করে বা ভ্যান চালায় অথবা দিনমজুর, নিরাপত্তারক্ষী, নাইট গার্ড, হকার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে। এই ঈদের ছুটিতে কাজ না থাকায় তারা মৌসুমী কসাই হয়ে উঠেছেন এবং কসাইয়ের কাজ করে বাড়তি আয়ের আশা করছেন। যারা কোরবানি দেবে তারাও কসাই খুঁজছে রাস্তায়। তারা কসাইদের সঙ্গে চুক্তি করছে। জবাই ও মাংস কাটা থেকে শুরু করে বিতরণের চুক্তি পর্যন্ত কাজ করছে।
গরুর দাম ও ওজন অনুযায়ী কসাই কাজ পাচ্ছেন বলে জানান তারা। গরুর সঠিক দামের উপর ভিত্তি করে কসাইরা তাদের মজুরি নির্ধারণ করে। অনেকে গরুর আকার ও ওজন দেখে দামও নির্ধারণ করেন। প্রতি হাজার টাকার গরুর বিপরীতে তারা মজুরি নির্ধারণ করছে ১২০ থেকে ২০০ টাকা। গরুর আকার ছোট হলে মজুরি বেশি নিচ্ছে, আর বড় হলে কম মজুরি নিতে রাজি।
ঈদুল আযহায় সবাই পরিবারের সাথে গোশত খেতে চায়। মাংসের দাম বাড়ায়, সবাই তাদের তৃপ্তি সহ খেতে পারে না। তাই ঈদে কসাইয়ের কাজ করি। বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে যেন মাংস পেতে পারি । সোমবার রাজধানীর মালিবাগের কাঁচাবাজারে এক কসাই এসব কথা বলেন। পেশায় তিনি মুরগি বিক্রেতা। অতিরিক্ত অর্থ এবং কিছু মাংসের জন্য, তিনি একদিনের জন্য কসাইয়ের কাজ করতে কসাই বনে যান।
তবে শুধু সেই নয়, কোরবানির ঈদের দিন রাজধানীতে একদিনের জন্য কসাইয়ের কাজ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের একজন পেশায় একজন চালক, তবে কোরবানির এই দিনে তার পরিচয় একদিনের কসাই। ঈদের দিন আহমদ হোসেন তার ছেলে, জামাই ও বন্ধুদের নিয়ে ঈদের নামাজের পর পেশাদার কসাইয়ের মতো গরু-মাংস কাটতে কাটে।
আহমদ হোসেন বলেন, ‘আমি গাড়ি চালকের কাজ করি। ঈদের দিন কাজের চাপ নেই। তাই আমি আমার ছেলে, জামাই এবং বন্ধুদের সাথে কসাই হিসাবে কাজ করেছি। নামাজের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৬টি গরু ও ১০টি ছাগলের মাংস কাটার কাজ করেছি। গরু ভেদে ৮-২০ হাজার টাকা। আর ছাগল নিয়েছি ২-৮ হাজার টাকায়।
বগুড়া থেকে জহুরুল ইসলাম ঈদের আগের দিন আটজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন শুধু গরু পালন ও মাংস কাটার জন্য। তাদের কেউই পেশাদার কসাই নয়। কৃষি কাজসহ যা কিছু পাওয়া যায় সে কাজই করেন। তবে প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে তারা নিয়মিত ঢাকায় আসেন। তিনি বলেন, “আমরা একদিনের জন্য কসাই। ঈদের দিন নামাজের পর ১০-১২টি গরু ও ১৫-২০টি ছাগল জবাই করা যায়। এতে একদিনে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়, শেয়ার হয় ১৫-২০টি। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫টি গরু ও ৮টি ছাগল বানাই।
কিন্তু কসাইয়ের অভাবে সব প্রস্তুতি ভেস্তে যেতে পারে। কারণ রাজধানীতে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত কসাই নেই। তাই কসাইয়ের ঘাটতি মেটাতে ঈদকে ঘিরে অনেক মৌসুমী কসাই মাঠে নামেন, যাদের একদিনের কসাই নামে নামকরণ করা হয়।