নাইজেরিয়ায় আকস্মিক বন্যায় ১৫০ প্রাণহানি, নিখোঁজ অনেক,সর্বত্র ধ্বংসচিত্র

নাইজেরিয়া: “পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর পূর্ণাঙ্গ সরকারী নাম হল নাইজেরিয়া ফেডারেল রিপাবলিক। এর পশ্চিমে বেনিন, উত্তরে নাইজার, উত্তর-পূর্বে চাদ, পূর্বে ক্যামেরুন এবং দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর বা গিনি উপসাগর অবস্থিত। এর আয়তন ৯,২৩,৭৬৮ বর্গকিলোমিটার, যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৬ গুণ, যা এটিকে পশ্চিম আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ করে তোলে। এর জনসংখ্যা ২১ কোটি। নাইজেরিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং বিশ্বের ৭ম জনবহুল দেশ”।
নাইজেরিয়ার নাইজার রাজ্যের মোকওয়ায় আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ১৫০ জন মারা গেছেন। আরও অনেকে নিখোঁজ। হাজার হাজার মানুষ তাদের আশ্রয়স্থল এবং জীবিকা হারিয়েছেন। রাজ্যের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র ইব্রাহিম আউদু হুসেইনি শনিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, মৃতের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। কমপক্ষে ৩,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ৩০০ টিরও বেশি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং দুটি বড় সেতু ভেসে গেছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মোকওয়ায় দুর্যোগ শুরু হয়েছিল। নাইজার নদী তীব্র গতিতে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করে। রাতারাতি ঘরবাড়ি, দোকান, মসজিদ এবং মাদ্রাসা প্লাবিত হয়ে যায়। স্থানীয় রেডক্রস সূত্রে জানা গেছে, কমপক্ষে ৭৮ জন গুরুতর আহত এবং চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি ট্রাস্ট জানিয়েছে যে, একটি ইসলামিক স্কুলের ৫০ জন শিশু নিখোঁজ রয়েছে। এই ঘটনায় পুরো রাজ্য শোকাহত। অনেক পরিবার একাধিক সদস্যকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
রাজধানী আবুজা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে মোকওয়ারা শহর পরিদর্শন করেছেন একজন এএফপি সাংবাদিক। তিনি বলেন, উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে কাজ করছে। যদিও বন্যার পানি কমে গেছে, তবুও বিপদ এখনও রয়ে গেছে, কারণ অনেক এলাকা এখনও প্লাবিত।
২৯ বছর বয়সী সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ ট্যাঙ্কো বলেন,"আমি এই বাড়িতে বড় হয়েছি। আজ, আমি এখানে ১৫ জনকে হারিয়েছি। বাড়িঘর, সম্পত্তি, স্মৃতি - সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে" ।
জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এনইএমএ) এই দুর্যোগকে "অভূতপূর্ব" বলে বর্ণনা করেছে। সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনী এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
ইব্রাহিম আউদু হুসেইনি বলেন, "ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মৃতদেহ থাকতে পারে। আমাদের খননকারীর প্রয়োজন। আমরা অনেক জায়গায় খালি হাতে কাজ করছি।"
রেডক্রসের প্রধান গিদিওন আদামু বলেন, নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু অনুমান করা হচ্ছে যে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নাইজেরিয়ায় এই ধরনের বন্যা আরও ঘন ঘন এবং তীব্রতর হচ্ছে। দেশটির আবহাওয়া সংস্থা এই সপ্তাহে নাইজার সহ ১৫টি রাজ্যের জন্য আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করেছে।
২০২৪ সালে, দেশে বন্যায় প্রায় ১,২০০ জন মারা গিয়েছিল এবং প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। এবারও পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সাহায্য এখনও পৌঁছায়নি। তবে, জাতিসংঘ এবং রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক শাখা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পূর্ণাঙ্গ আবাসন, খাদ্য সহায়তা এবং মনোসামাজিক সহায়তা দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। তবে, অনেক এলাকা এখনও ডুবে থাকায়, কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সময় লাগছে।
আরও পড়ুন- দুর্ভিক্ষের গুরুতর ঝুঁকিতে গাজার সকল জনগোষ্ঠী জাতিসংঘ প্রতিবেদন
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল ‘বার্সেলোনা’

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সরাসরি গুলি / গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েও ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১০

স্ত্রীর হাতে মার খেলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো! কি ঘটেছিল সেদিন?

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত ‘হামাস’

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা আসতে পারে : প্রেস সচিব
